পণ্ডিতরা বলেন সাহিত্য হল জীবনের দর্পণ। দর্পণে কিন্তু বস্তুর আলোকিত অংশেরই প্রতিবিম্ব ফুটে ওঠে। তাহলে অনালোকিত অংশের প্রতিবিম্ব কীভাবে ধরা যাবে? আঁধারে ঢাকা যে জীবন সাহিত্য-দর্পণে প্রতিবিম্বিত হয় না সেই জীবন প্রত্যক্ষ করতেহলে দুই চোখের পিছন দিকে থাকতে হয় তৃতীয় নয়ন। এই চোখের ক্যামেরায় সেই অদৃশ্য জীবন প্রতিভাত হয়। আবদুল জব্বার ছিলেন এই তৃতীয় নয়নের অধিকারী এক যুগন্ধর সাহিত্যিক। জীবনের সাথে জীবন যোগ করে এই ক্ষমতা অর্জন করতে হয়। দূর থেকে দেখে নয়, জনজীবনের সাথে মিলেমিশে একাত্ম হয়ে দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাকে শিল্পের রূপ দিতে হয়। গল্প, উপন্যাস, নাটক, ফিচার মিলিয়ে আবদুল জব্বার প্রায় ষাটটি বই লিখেছেন। তাঁর সব লেখাই কমবেশি অভিজ্ঞতা নির্ভর এবং এটিই তাঁর লেখার বৈশিষ্ট্য। সারা জীবন দারিদ্র্য ও বঞ্চনার শিকার হয়েও বাংলা সাহিত্যে বিশেষ ধরনের অবদান রেখে গেছেন। তাঁর গুণমুগ্ধ পাঠকের সংখ্যাও বিপুল। আবদুল জব্বার সম্প্রতি প্রয়াত হয়েছেন। চরম প্রতিকূলতার মধ্যে জীবন অতিবাহিত হওয়ায় উত্তরাধিকারীদের জন্য তিনি কিছুই রেখে যেতে পারেননি। সম্বল বলতে আছে বিভিন্ন স্বাদের ষাটটি বই। সেগুলি থেকে আটটি গল্প ও উপন্যাস নির্বাচন করে আমরা এই অবিস্মরণীয় সাহিত্যিকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। সত্ব সংক্রান্ত অন্তরায় না থাকলে 'নির্বাচিত আবদুল জববার রচনাবলি' আরও প্রশস্ত করা যেত। তবু আমাদের দাবি এই সংকলনে জববার খুব সার্থকভাবেই মূর্ত হয়ে উঠেছেন। সেই দাবি কতটা সঙ্গত তা বিচারের অধিকার আমরা পাঠকের ওপরই অর্পণ করলাম।