সবুজ বার্তা
June 12, 2025 at 11:26 PM
রতন জি কে নিয়ে শুরু হয়ে গেছে রোমান্টিসিজম।
Air India দুর্ঘটনার পর টাটা গ্রুপ মৃতদের পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ব্যাস দুর্ঘটনার মৃত্যু মানুষগুলোকে ভুলে রতন প্রেমীরা আবেগে বাঁচতে শুরু করেছে। কারও কারও চোখে জল এসে গেছে।
চলুন একটু হিসাব করি -
Air India-এর যে ফ্লাইটটি আজ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, সেটি ছিল Boeing 787-8 Dreamliner। এই ধরনের একেকটি বিমানের দাম প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। কিন্তু বিমানের দাম যতই হোক, প্রতিটি এয়ারলাইন্স বিমানের ওপর বিমা করে রাখে, আর সেই বিমার টাকাতেই দুর্ঘটনার ক্ষতি সামলানো হয়। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নিশ্চয় হয়নি।
এই বিমানের বিমা (যাকে বলা হয় ‘Hull Insurance’) প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ১,৬০০ থেকে ২,৫০০ কোটি টাকার মতো। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে প্রতিটি যাত্রীর জন্যও আলাদা বিমা থাকে। সেটিও কম নয়, সব মিলিয়ে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকারও বেশি।
এখন যদি আমরা দেখি, ২৪১ জন যাত্রী মারা গেছেন, এবং যদি প্রত্যেক পরিবারকে ১ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়, তাহলে সবমিলিয়ে খরচ পড়ে ২৪১ কোটি টাকা, যা বিমা থেকেই আসবে।
অর্থাৎ এই ক্ষতিপূরণ আসলে কোনও দয়াদাক্ষিণ্য নয়, এটা বিমা কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া যাবে। এটুকু দেওয়াটা বাধ্যতামূলকই।
এখানেই শেষ নয়।
যে ফ্লাইটটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, সেখান থেকে এক যাত্রী ফ্লাইট ছাড়ার ঠিক আগেই বিমানের ভেতরের ভিডিও করেছিলেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে অনেক কিছু কাজ করছে না, আলো নিভে আছে, যাত্রীরা অস্বস্তিতে। এমনকি বোতামগুলোও কাজ করছে না। অর্থাৎ উড়ার আগেই বিমানটি সমস্যা ছিল। এই অবস্থার মধ্যেই বিমানটি উড়ে। আর উড়েই, ভয়াবহ বিপর্যয়।
এ এক রক্ষণাবেক্ষণহীন, অবহেলিত ব্যবস্থার প্রমাণ। গত বছর পর্যন্ত একাধিকবার Air India-এর সার্ভিস নিয়ে অভিযোগ এসেছে। এত বড় প্রতিষ্ঠান কি এসব ব্যাপারে সাবধান থাকার কথা ছিল না?
এটা দুর্ঘটনা, না এটা গাফিলতির ফল? আর এখন সেই গাফিলতিকে ঢেকে দেওয়ার জন্য সামনে আনা হচ্ছে ১ কোটি টাকার ঘোষণা। ঘোষণাটা আইনসঙ্গত, কিন্তু প্রচারটা যেন দয়ার দৃষ্টান্ত।
একটা ২ হাজার কোটি টাকার সম্পদ, ২৪১ জন যাত্রী, এতো দায়িত্ব কি শুধু "বিমা আছে তো" বলে শেষ করা যায়?
এখন কথা হলো এই দুর্ঘটনার দায় কীভাবে বোঝা উচিত?
অবহেলা নয় কি? তাহলে এই ১ কোটি টাকা কোনও বিচার নয়। বরং এই ঘোষণা গুলোই আরও একবার সেই অবহেলাকে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা।
দেখতে দেখতে আমরা যেন কর্পোরেট ব্র্যান্ড আর কিছু বিজ্ঞাপনী ভাষার সামনে এতটাই নরম হয়ে গেছি, যে সত্যিকারের গাফিলতি চোখে পড়েও কিছু বলি না।
রতনজি-কে অনেকেই শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু সেই শ্রদ্ধার সুযোগ নিয়ে যদি তার কোম্পানি এভাবে গণমৃত্যুর দায় ঢেকে দেয়, তাহলে প্রশ্ন তোলা দায়িত্ব।
এই তথ্য সংগ্রহ করে লেখাটা লিখছি কারণ যাদের স্বজন চিরতরে চলে গেছে, তাদের ক্ষতিপূরণের অঙ্ক দেখে কর্পোরেট প্রেমে ভেসে যাইনি।
এটা আবেগের নয়, এটা বাস্তবের গল্প। আর বাস্তবটা জানলে খুব অস্বস্তি লাগে।
https://whatsapp.com/channel/0029Va8YVd2GOj9rEfHO3d2Q
👍
😳
7