
Almirsad বাংলা
1.7K subscribers
About Almirsad বাংলা
আল মিরসাদ— বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামের সুদৃঢ় ময়দান
Similar Channels
Swipe to see more
Posts

https://almirsadbd.com/b-m-pr-1/ *আইএস-খোরাসানকে বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে দাঁড় করানোর নীতি: এর নেপথ্যে কারা, কেন এবং কী উদ্দেশ্যে?* ✍🏻 নিযাম মুহাজির ২০১৩ থেকে ২০১৯— এই সময়পর্বে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ এমন এক কৌশলের আশ্রয় নেয়, যার উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের এক সর্বব্যাপ্ত ও মহাশক্তিধর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। তারা সচেতনভাবে এক বিভীষিকাময় আতঙ্কের প্রতিমূর্তি গড়ে তুলতে প্রয়াসী ছিল। সামরিক ও কৌশলগত প্রেক্ষাপটে আইএস এক নির্মম নীতির আশ্রয় নিয়ে নৃশংসতার সকল সীমা অতিক্রম করে তারা শিহরণজাগানো অপরাধ সংঘটিত করে। নির্বিচারে গণহত্যা, অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা, পানিতে নিমজ্জিত করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর, কিংবা শিরশ্ছেদ— এগুলো নিছক নৃশংসতার বহিঃপ্রকাশমাত্র ছিল না; বরং একটি সুপরিকল্পিত কৌশলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে আইএসের এই নৃশংসতা কেবল বাস্তব জগতে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং এটি মনস্তাত্ত্বিক অস্ত্রে রূপান্তরিত হয়েছিল। পরিকল্পিত প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে তারা ভয়াবহ দৃশ্যাবলিকে ছড়িয়ে দেয়, যেন এই আতঙ্ক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের শক্তিমত্তা বহুগুণে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করে। বাস্তবে তাদের সামরিক সক্ষমতা যতটুকু ছিল, প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে তারা তার বহুগুণ শক্তিশালী বলে আত্মপ্রতিষ্ঠা করে। বিশ্বরাজনীতির অঙ্গনে আইএসের অতিরঞ্জিত প্রতিকৃতি বিশেষভাবে এক শ্রেণির জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক হয়ে ওঠে। পশ্চিমা শক্তিগুলো, তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম— সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই ধারণাকে আরো বিকশিত করে তোলে। কারণ এই কৃত্রিম আতঙ্ক বৈদেশিক নীতিকে বৈধতা প্রদান করে, সামরিক আগ্রাসনকে ন্যায্যতা দেয়, এবং জনমত নিয়ন্ত্রণের এক শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে ওঠে। যদিও আইএস বাস্তবেই এক বিপজ্জনক গোষ্ঠী ছিল, তথাপি তাদের প্রকৃত শক্তি সেই অতিরঞ্জিত প্রতিচ্ছবির তুলনায় নিতান্তই নগণ্য। তথাকথিত খেলাফতের শীর্ষ অবস্থানেও তারা কখনোই পশ্চিমা বিশ্ব কিংবা আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর জন্য প্রত্যক্ষ সামরিক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি তাদের ‘খোরাসান শাখা’র উত্থানের পরও বাস্তবতা একই ছিল, একটি বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী— যার প্রভাব কেবলমাত্র নির্দিষ্ট ভৌগোলিক পরিসীমায় সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, তথাকথিত খিলাফতের পতনের পরও এবং আইএস-খোরাসান শাখার বহুমুখী বিপর্যয়ের পরও, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই সংগঠনকে এক অনতিক্রম্য হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। গণমাধ্যমে এখনো এ নিয়ে আলোচনার ঢেউ প্রবাহিত হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, কেন? আইএসের হুমকিকে অতিরঞ্জিতকরণ: কাদের স্বার্থে? বিশ্বরাজনীতির ক্ষেত্রে সংকট কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করার এক সুপ্রাচীন কৌশল রয়েছে। কিছু রাষ্ট্র এবং তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই কৌশলকে কাজে লাগিয়ে এক নতুন বাস্তবতা সৃষ্টি করে, যা তাদের রাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থরক্ষার জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে। আফগানিস্তানে পরাজয়ের পর পশ্চিমা শক্তিগুলোর জন্য এটি ছিল এক দারুণ সুযোগ, দেশটিকে ‘অস্থিতিশীল’ হিসেবে চিত্রিত করে সেখানে নিজেদের পরোক্ষ প্রভাব বজায় রাখার। আইএস-খোরাসানকে এক মহাহুমকি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এই কৌশলেরই অংশবিশেষ। এই প্রচারণার কেন্দ্রে রয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। এক বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে তারা ঘটনাবলিকে উপস্থাপন করে, যা এক ধরনের নিয়ন্ত্রিত আতঙ্কের জন্ম দেয়। এভাবে তারা এই দুর্বল সংগঠনটিকে এক বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হুমকি হিসেবে তুলে ধরে এবং নির্দিষ্ট স্বার্থ রক্ষার ভিত্তি তৈরি করে। স্থানীয় ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যেও অনেকে এই হুমকির অতিরঞ্জনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। কিছু রাষ্ট্র নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে আইএস হুমকিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, আবার কিছু রাষ্ট্র এই সংগঠনের অস্তিত্বকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সহানুভূতি আদায় করছে। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক বৈঠকেও এই কৌশল দৃশ্যমান ছিল, যেখানে কিছু দেশের প্রতিনিধি আইএসকে সম্পর্কে এমন সব দাবি উপস্থাপন করেছেন, যা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিহীন। বাস্তবতা ও প্রচারণার ব্যবধান যদি আইএস-খোরাসানের হামলায় নিহতের সংখ্যা পর্যালোচনা করা হয়, তবে দেখা যাবে যে এটি মোটেই একটি বৈশ্বিক আতঙ্ক সৃষ্টি করার মতো পরিসংখ্যান নয়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইএস-খোরাসানের হামলায় বার্ষিক গড়ে ২৫৪ জন নিহত হয়েছে। অপরদিকে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানে এর চেয়ে শতগুণ বা হাজারগুণ বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ইয়াহুদিবাদী আগ্রাসনে গাজার বার্ষিক মৃত্যুর হার আইএস-খোরাসানের হামলার তুলনায় ১৪১ গুণ বেশি। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে এই সংখ্যার প্রায় সাতগুণ বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। আর যুক্তরাষ্ট্রে শুধুমাত্র সহিংস অপরাধেই বছরে প্রায় ২৪,০০০ মানুষ নিহত হয়—যা আইএস-খোরাসানের কারণে নিহতের তুলনায় ৮৪ গুণ বেশি। কিন্তু তবু গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক মঞ্চে আইএস-খোরাসানকে প্রধান বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে প্রচার করা হয়। অন্যদিকে স্বৈরশাসকদের লালিত-পালিত বিভিন্ন প্রক্সি গোষ্ঠী— যারা নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে নির্মম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, ভূমি ও আকাশপথ থেকে বেসামরিক নাগরিকদের উপর নিষ্ঠুর আঘাত হানছে এবং অগণিত ব্যক্তিকে জোরপূর্বক অন্তর্ধান ও কারারুদ্ধ করছে, তা প্রায়শই দৃষ্টির অন্তরালে থেকে যায়। আইএস-হুমকিকে অতিরঞ্জিতকরণ এবং এর সুদূরপ্রসারী পরিণতি রাষ্ট্র, গোপন গোয়েন্দা সংস্থা, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমসমূহের পক্ষ থেকে আইএস-কে (ISIS-K) ঘিরে হুমকির অতিরঞ্জিত চিত্র অঙ্কনের নীতি বাস্তবতাবিবর্জিত এবং সুগভীর রাজনৈতিক অভিসন্ধির প্রতিফলন। কিন্তু এই কৃত্রিম বিভ্রম তাদের জন্য কোনো বাস্তবিক সুফল বয়ে আনে না; বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সংঘাতকে ঘনীভূত করে, সংকটকে দীর্ঘায়িত করে এবং রাজনৈতিক জটিলতার এক দুর্ভেদ্য জাল বিস্তৃত করে। এহেন প্রচারণা কেবল ইসলামবিদ্বেষকে (Islamophobia) উসকে দেয়, যা প্রকৃত সামাজিক সংকটের দিকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়ে যায় এবং অমূল্য সম্পদকে এমন এক অবাস্তব যুদ্ধের জন্য ব্যয় করে, যা প্রকৃত সমস্যার নিরসনে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। আইএস-কে সম্পর্কে বৈশ্বিক প্রচারের এই কৃত্রিম অতিরঞ্জন শেষাবধি উক্ত সংগঠনকেই আরও বলীয়ান করে তোলে। এটি তাদের সদস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করে এবং তাদের লক্ষ্য ও আদর্শের প্রতি অনুগামীদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের ইসলামবিরোধী নীতির চাপে যারা নিপীড়িত ও বঞ্চিত বোধ করে, তারা আইএসকে (ISIS-K) ন্যায্য প্রতিরোধ ও সুবিচারের এক প্রকৃত মঞ্চ বলে বিবেচনা করতে পারে, যা তাদের এই সংগঠনের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। ঠিক এই প্রবণতাই পরিলক্ষিত হয়েছিল তথাকথিত আইএস খিলাফতের উত্থানের সময়, যখন পশ্চিমা বিশ্বের এক বৃহৎ তরুণ জনগোষ্ঠী ইরাক ও সিরিয়ায় অভিপ্রয়াণ করেছিল, এক ইসলামি ব্যবস্থার স্বপ্নে বিভোর হয়ে। কিন্তু বাস্তবতার নিষ্ঠুর পরিহাসে, তারা এক উগ্র মতাদর্শের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়, অবিরাম বোমাবর্ষণের শিকার হয় এবং শেষতক পশ্চিমা শক্তির কূটকৌশলের নিষ্পেষণে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। উপসংহার যদিও আইএস-কে (ISIS-K) বাস্তবিক অর্থেই একটি নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিদ্যমান, তথাপি এর ব্যাপ্তি ও শক্তির অতিরঞ্জিত চিত্র অঙ্কন মূলত রাজনৈতিক ও প্রচারণামূলক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার একটি কৌশলমাত্র। বৈশ্বিক শক্তিসমূহ, গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসমূহ এই সংগঠনের উপস্থিতিকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করে ব্যর্থ নীতির ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে, গোপন কৌশলগত স্বার্থ সংরক্ষণ করতে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর পরোক্ষ চাপ প্রয়োগ করতে চায়। বাস্তব হুমকির যথাযথ মূল্যায়নের জন্য প্রোপাগান্ডার মোহজাল ত্যাগ করে যুক্তিনিষ্ঠ বিশ্লেষণের পথ অবলম্বন করা আবশ্যক। আইএস-সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলির নিরীক্ষা করা উচিত নির্ভুল তথ্য, সুস্পষ্ট প্রমাণ ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার এক গভীর অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা—না যে কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের রচিত প্রচারণার আখ্যানের উপর নির্ভর করে। ইতিহাস সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে, এ ধরনের গোষ্ঠীর প্রভাব কৃত্রিমভাবে অতিরঞ্জিত করা কখনো সংকট নিরসনের পথ প্রশস্ত করে না; বরং নতুন সংকটের বীজ বপন করে। ব্যর্থ নীতির পুনরাবৃত্তি পরিহার করে বৈশ্বিক নেতৃত্বের এখন প্রয়োজন সেই কৌশলগত সিদ্ধান্তের পুনর্মূল্যায়ন, যা এই ধরনের সংগঠনের উত্থানের এক অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।

https://almirsadbd.com/khdr-p-4th/ *খাওয়ারিজদের পরিচয়* [ চতুর্থ পর্ব ] ✍🏻 রাশেদ শফীক *নহরাওয়ানে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও খাওয়ারিজদের সংলাপ* নহরাওয়ানে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও খাওয়ারিজদের মধ্যে একাধিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। যখন তিনি তাদের বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, তারা নিম্নলিখিত আপত্তিসমূহ উত্থাপন করে— ১. জামাল (উষ্ট্র) যুদ্ধে নারীদের ও শিশুদের যুদ্ধলব্ধ সম্পদের (গনীমাহ) অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি; অথচ অর্থসম্পদ বিতরণ করা হয়েছে, কেন? ২. সিফফিনে হযরত মু‘আবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে কেন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাম থেকে “আমীরুল মুমিনিন” উপাধি পরিহার করা হলো এবং কেন তাঁর (হযরত মু‘আবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু) প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা হলো? ৩. হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সালিসদের উদ্দেশে বলেছিলেন: “যদি আমি খিলাফতের উপযুক্ত হই, তবে আমার অধিকার প্রতিষ্ঠা করো।” তাদের মতে, এই উক্তি তাঁর খিলাফতের বৈধতা সম্পর্কে সংশয়ের ইঙ্গিত বহন করে। ৪. যে অধিকার তাঁর স্বতঃসিদ্ধ ও নিরঙ্কুশ ছিল, তার নিষ্পত্তির জন্য তিনি সালিসি প্রক্রিয়ায় সম্মত হলেন কেন? *হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতিতর্ক ও খণ্ডন* হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের আপত্তিসমূহ যথাযথ যুক্তি ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে খণ্ডন করেন— প্রথম আপত্তির জবাবে তিনি বলেন, বসরার সরকারি কোষাগার থেকে ত্বালহা ও যুবাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) যে সম্পদ গ্রহণ করেছিলেন, তা খুবই সামান্য ছিল। এছাড়া, নারী ও শিশুরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি এবং তারা ইসলামী শাসনের অধীনস্থ মুসলিম নাগরিক ছিল। দ্বিতীয় আপত্তির প্রতিক্রিয়ায় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুদাইবিয়ার সন্ধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন, যেখানে তাঁর নবুয়তের পদবি পরিহার করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, একদিন আমি তাদের সঙ্গে অনুরূপ একটি চুক্তি সম্পাদন করব।” তৃতীয় আপত্তির ব্যাখ্যায় তিনি স্পষ্ট করেন যে, সালিসদের মনোনয়ন কেবল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ছিল এবং এটি তাঁর খিলাফতের বৈধতা সম্পর্কে কোনো সংশয়ের ইঙ্গিত বহন করে না। তিনি নবীজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুগে নজরানের খ্রিস্টানদের সঙ্গে সংঘটিত মুবাহালার ঘটনাকে এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, যেখানে উভয় পক্ষ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সম্মত হয়েছিল। চতুর্থ আপত্তির খণ্ডনে তিনি বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং বানু কুরায়জা গোত্রের বিচারের জন্য সা‘দ ইবনু মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সালিস হিসেবে মনোনীত করেছিলেন, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই ছিল।” --- *খারিজিদের বিদ্রোহের কারণ* খারিজিদের বিদ্রোহের কারণসমূহ নিম্নরূপ— ১. খিলাফত সংক্রান্ত মতপার্থক্য খাওয়ারিজদের বিদ্রোহের মূল কারণ ছিল নেতৃত্ব সংক্রান্ত তাদের কঠোর ও অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি। তারা বিশ্বাস করত, সে সময়কার শাসকগণ তাদের নির্ধারিত কঠোর মানদণ্ড অনুসারে খিলাফতের উপযুক্ত ছিলেন না। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত মু‘আবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর মধ্যকার সংঘাতকে তারা ক্ষমতার লড়াই হিসেবে চিহ্নিত করে এবং উভয়ের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। ২. সালিসের ইস্যু খাওয়ারিজরাই প্রথমে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সালিস গ্রহণ করতে বাধ্য করে। এটি সংঘটিত হওয়ার পর, (যখন রায় তাদের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে যায়) তারা তাকে সিদ্ধান্ত ত্যাগ করে পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করার দাবি জানায়, যার জবাবে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেন। ৩. শাসকদের উপর যুলুমের অভিযোগ ও সমাজে পাপাচারের বিস্তার তারা প্রচার করত যে, শাসকগণ যুলুম চালাচ্ছে এবং সমাজ নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অথচ বাস্তবে খাওয়ারিজরা নিজেদের বিদ্রোহের মাধ্যমে অধিকতর রক্তপাত, বিশৃঙ্খলা ও অবিচারের জন্ম দিয়েছিল। ৪. অর্থনৈতিক অসন্তোষ ও বিদ্বেষ খাওয়ারিজদের বিদ্রোহের পেছনে অর্থনৈতিক কারণও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। যুল-খুয়াইসরাহ নামক ব্যক্তি, যে প্রথমবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছিল, সেই চরমপন্থী মানসিকতা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করেছিল। তারা হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করত এবং তাঁর শাহাদাতের পর তারা রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুটপাট করে ও হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে।

https://almirsadbd.com/khdr-p-5th/ *খাওয়ারিজদের পরিচয়* [ পঞ্চম পর্ব ] ✍🏻 রাশেদ শফীক *খারিজিদের বিদ্রোহী কর্মকাণ্ড* যেমনটি ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, খারিজিরা চরমপন্থার ভিত্তিতে তাদের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেছিল এবং সেই উদ্দেশ্যেই তারা নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছিল। তাদের বিপ্লবী আন্দোলন ছিল সর্বদাই নিষ্ঠুর ও রক্তক্ষয়ী। এই ধারাবাহিকতা সূচিত হয়েছিল মুহাক্কিমা গোষ্ঠীর বিদ্রোহের মাধ্যমে, যারা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিল। পরবর্তী কালে এই বিদ্রোহী দলসমূহ আরও ক্ষুদ্র উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যারা গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চালায় এবং পরবর্তীকালে উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধেও অস্ত্র ধারণ করে। ৬৪ হিজরিতে নাফি’ ইবনুল আজরাকের নেতৃত্বে খাওয়ারিজরা বহু শাখায় বিভক্ত হয়, যা আব্বাসীয় খেলাফতের সূচনা পর্যন্ত টিকে ছিল। আধুনিক পরিভাষায়, খাওয়ারিজদেরকে একপ্রকার “বিরোধী আন্দোলন” হিসেবেও চিত্রিত করা যায়, যাদের সংগ্রামের বিবরণ ইতিহাসের দলিলসমূহে এবং বিভিন্ন মতবাদবিষয়ক গ্রন্থসমূহে সংরক্ষিত রয়েছে। --- *খাওয়ারিজদের উপদল (ফেরকা) ও তাদের বিভাজন* আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রতি অনুগ্রহস্বরূপ খারিজিদের মধ্যে মতাদর্শগত বিভেদ সৃষ্টি করেছিলেন। যদি তারা এককাট্টা থাকত, তবে মুসলিম সমাজের জন্য তারা এক ভয়াবহ বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াত। তাদের বিভক্তির প্রধান কারণ ছিল তাদের উগ্র মতবাদ, যা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ব্যাখ্যা ও চরমপন্থী দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিত। যেমন, নাফি’ ইবনুল আজরাক যখন তাকিয়্যা (আকীদা গোপন করা) ও তার প্রতিপক্ষদের সন্তানদের বিষয়ে কঠোর বিধান প্রবর্তন করল, তখন তার দলের অভ্যন্তরেই মতবিরোধ দেখা দেয়। ফলে নতুন নতুন উপদলের উদ্ভব ঘটে, এবং তাদের মধ্যে ক্রমাগত বিভাজন চলতে থাকে। সময়ের প্রবাহে তাদের অনেক দল নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, কিছু দল একে অপরের সঙ্গে একীভূত হয়েছে, আবার কেউ কেউ তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছে। --- *খারিজি ফেরকার সংখ্যা: এক ঐতিহাসিক রহস্য* ইসলামী পণ্ডিতগণ খারিজিদের ফেরকার সংখ্যা নির্ধারণের বিষয়ে বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন। ইমাম আবুল হাসান আল-আশআরি রাহিমাহুল্লাহ তাদের চারটি প্রধান উপদলে বিভক্ত করেছেন। অপর কিছু গবেষক তাদের পাঁচ, সাত কিংবা পঁচিশটি উপদলে বিভক্ত করেছেন। কিছু ঐতিহাসিকের মতে তাদের প্রকৃত সংখ্যা আরও অধিক ছিল। খারিজি ফেরকার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা চিহ্নিত করা দুরূহ কারণ— ১. তাদের অস্থিতিশীলতা: খারিজিরা সংঘাত ও রাজনীতির প্রবাহে ক্রমাগত পরিবর্তিত হতো এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ত। ২. তুচ্ছ মতপার্থক্যে বিচ্ছিন্নতা: খারিজিদের মধ্যে ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও বিরোধ দেখা দিত, যার ফলে তাদের মাঝে একের পর এক নতুন উপদলের জন্ম হতো। ৩. তাদের গোপনীয় নীতি: নিজেদের মতাদর্শ রক্ষা এবং শত্রুর নিকট প্রকাশ না করার মানসে তারা বহু গুরুত্বপূর্ণ লিখিত দলিল গোপন রেখেছিল, যার ফলে তাদের বিশ্বাস ও ইতিহাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য সংরক্ষণ দুষ্কর হয়ে ওঠে। --- *ইবাদিয়া ফেরকা: টিকে থাকা একমাত্র খারিজি সম্প্রদায়* খারিজিদের মধ্যে একমাত্র টিকে থাকা উপদল হলো ইবাদিয়া সম্প্রদায়, যার অনুসারীরা আজও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান। তাদের রাজনৈতিক, ধর্মতাত্ত্বিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি একটি স্বতন্ত্র গবেষণার দাবিদার। --- *ইবাদিয়া সম্প্রদায়ের নেতা ও তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরাধিকার* ইবাদিয়ারা তাদের চিন্তাধারার সূত্রপাত জাবির ইবনু যায়েদ আল-আজদির মধ্যে খুঁজে পায়, যিনি হযরত ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর অন্যতম ছাত্র ছিলেন। তবে, তাদের সম্প্রদায়ের নামকরণ আবদুল্লাহ ইবন ইবাদের নামানুসারে হয়েছে, যিনি শাসকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবন ইবাদ ছিলেন বানু তামীম গোত্রের অন্যতম ব্যক্তি এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগের তাবিঈদের মধ্যে গণ্য হন। --- *ইবাদিয়াদের দৃষ্টিতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিগণ* খারিজিরা সাধারণত হযরত আবু বকর ও হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ছিল। তবে, হযরত উসমান ও হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমার প্রতি তারা ঘৃণাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করেছিল, এবং তাদের সম্পর্কে এমন কিছু বক্তব্য প্রদান করেছিল, যা থেকে আল্লাহ তাআলা তাদের মুক্ত রেখেছেন। ত্বালহা ও যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার বিরুদ্ধেও তারা কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছিল, যদিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন— “আমার সাহাবিদের সম্পর্কে কটূক্তি করো না। সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন, যদি তোমাদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও দান করে, তবু তা আমার সাহাবিদের এক মুষ্টি খাদ্যের সমতুল্যও হবে না, বরং তার অর্ধেকের সমানও হবে না।” এখন প্রশ্ন হলো— যদি এই সম্প্রদায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠতম সাহাবিদের মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে তারা আদৌ কাকে সম্মানিত গণ্য করে?

https://almirsadbd.com/khdr-p-3rd/ *খাওয়ারিজদের পরিচয়* [ তৃতীয় পর্ব ] ✍🏻 রাশেদ শফীক *খাওয়ারিজদের উত্থান: সিফফিনের পর বিদ্রোহের কারণ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট* ইতিহাসের পাতায় কিছু মুহূর্ত থাকে, যা সভ্যতার গতিপথকে আমূল পরিবর্তন করে দেয়। হিজরি প্রথম শতকের রাজনৈতিক ও আদর্শিক টানাপোড়েনের এক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল সেই সন্ধিক্ষণ, যখন হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের পর মুসলিম সমাজ গভীর সংকটের সম্মুখীন হয়। তখন রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত, ন্যায়বিচারের মানদণ্ড চ্যালেঞ্জের মুখে এবং রাজনৈতিক বিভাজন তীব্রতর। এই সংকটের প্রেক্ষাপটেই খিলাফতের ভার গ্রহণ করেন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু। অন্যদিকে শামের গভর্নর হযরত মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু, যিনি হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট আত্মীয় এবং একজন বিচক্ষণ প্রশাসক ছিলেন, স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন— যতক্ষণ না শহীদ খলিফার হত্যাকারীদের বিচার ও প্রতিশোধ সম্পন্ন হয়, ততক্ষণ তিনি নতুন খলিফার আনুগত্য গ্রহণ করবেন না। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল আরও সুদূরপ্রসারী ও বাস্তবতাবোধসম্পন্ন। তাঁর অভিমত ছিল, সমগ্র সাম্রাজ্যকে প্রথমে সুসংহত করতে হবে; নতুবা বিচারের নামে তড়িঘড়ি করা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে আরও বিপর্যস্ত করবে। হত্যাকারীরা সাধারণ মানুষের মাঝে মিশে গিয়েছিল, তাদের চিহ্নিত করা ছিল দুষ্কর এবং শরীয়তের শর্তানুসারে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ সংগ্রহ করা ও শাস্তি নিশ্চিত করা ছিল এক দীর্ঘতর প্রক্রিয়া। অপরদিকে, হযরত মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু আশঙ্কা করছিলেন সময় যত বিলম্বিত হবে, হত্যাকারীরা তত ছড়িয়ে পড়বে এবং শাস্তির আওতার বাইরে চলে যাবে। এই মতবিরোধ ক্রমশ এক গভীর দ্বন্দ্বের রূপ নেয়, যা ইতিহাসে “মারকাতু সিফফিন” নামে খ্যাত সেই মহাযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। *সিফফিনের প্রান্তরে মুখোমুখি সংঘর্ষ* যখন দুই মহাশক্তির মুখোমুখি সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে, তখন একদিকে ইরাকি বাহিনীর নেতৃত্বে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, অন্যদিকে শামী বাহিনীর অধিনায়ক হযরত মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু— উভয়েই তাঁদের নিজ নিজ নীতিতে অবিচল থেকে যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হন। যুদ্ধ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয় এবং হযরত মুয়াবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাহিনী পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়, তখন তাঁর অন্যতম পরামর্শদাতা, কূটনৈতিক প্রজ্ঞায় অনন্য আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু এক যুগান্তকারী কৌশল প্রস্তাব করেন। তিনি পরামর্শ দেন, সৈন্যদের বর্শার ফলায় কুরআনের পাণ্ডুলিপি উত্তোলন করতে এবং ইরাকি বাহিনীকে আহ্বান জানাতে— আসুন, আমরা কুরআনের বিধানের আলোকে এই বিরোধের নিষ্পত্তি করি। মাসউদীর বর্ণনা অনুযায়ী, শামী বাহিনীর পাঁচ শতাধিক সৈন্য বর্শার অগ্রভাগে কুরআনের পাণ্ডুলিপি উঁচিয়ে ধরে এবং চিৎকার করে বলে— “আল্লাহর কিতাব আমাদের মাঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক!” *তাহকিম: আদর্শিক বিভাজনের সূচনা* হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এই কৌশলের অন্তর্নিহিত অভিসন্ধি অবলীলায় অনুধাবন করেছিলেন। তিনি গভীর অন্তর্দৃষ্টিতে উপলব্ধি করেন যে, এটি শত্রুপক্ষের এক সুদূরপ্রসারী কূটকৌশল যা মূলত তাদের পুনর্গঠনের জন্য সময়সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং ইরাকি বাহিনীর অভ্যন্তরে মতপার্থক্য উস্কে দেবে। তাই তিনি তাঁর অনুসারীদের সতর্ক করে বলেন— এই আহ্বানের ফাঁদে পা দেওয়া আত্মঘাতী হবে। কিন্তু ইরাকি বাহিনীর মধ্যে একটি অংশ যারা যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে মুক্তি চাইছিল, তারা এই আহ্বানকে এক পবিত্র আহ্বান বলে ধরে নেয় এবং জোরপূর্বক হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তাহকিম (সালিসির মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসা) মেনে নিতে বাধ্য করে। পরবর্তীকালে এই দলই “খারিজি” নামে পরিচিতি পায়, যারা ইসলামের মূলধারার দর্শন থেকে বিচ্যুত হয়ে চরমপন্থী এক মতবাদে পরিণত হয়। *খাওয়ারিজদের বিদ্রোহ ও হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি তাদের বৈরিতা* এই দল এতদূর চলে যায় যে, তারা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি আনুগত্য প্রত্যাখ্যান করে এবং তাঁকে “আমিরুল মুমিনীন” সম্বোধন করতেও অস্বীকৃতি জানায়। তারা প্রকাশ্যে তাঁকে সম্বোধন করে বলে— “হে আলী! কিতাবুল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে নাও, অন্যথায় আমরা তোমার সাথেও সেই আচরণ করব, যা আমরা উসমানের সাথে করেছি!” তাদের বক্তব্য ক্রমশ কঠোরতর হতে থাকে, তারা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর অবস্থানকে তীব্র সমালোচনার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে এবং তাঁকে তাহকিম মেনে নিতে বাধ্য করে। তারা নিজেদের অবস্থানের স্বপক্ষে কুরআনের নিম্নলিখিত আয়াতকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করত— > *”أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ نَصِيبًۭا مِّنَ ٱلْكِتَـٰبِ يُدْعَوْنَ إِلَىٰ كِتَـٰبِ ٱللَّهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٌۭ مِّنْهُمْ وَهُم مُّعْرِضُونَ“* > “তুমি কি দেখোনি সেই ব্যক্তিদের, যাদের কিতাবের জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল? যখন তাদের আহ্বান করা হয় যেন তারা আল্লাহর কিতাবের বিধান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং সম্পূর্ণভাবে বিমুখ হয়ে পড়ে।” (সূরা আল-ই-ইমরান: ২৩) এই তাহকিমের ঘটনা থেকেই খারিজিদের চূড়ান্ত উত্থানের সূচনা। প্রথমে তারাই যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তারাই একে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে চিহ্নিত করে এবং হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

https://almirsadbd.com/khdr-p-2nd/ *খাওয়ারিজদের পরিচয়* [ দ্বিতীয় পর্ব ] ✍🏻 রাশেদ শফীক *ইসলামের ইতিহাসে খাওয়ারিজদের বিভিন্ন উপাধি ও তাদের বৈশিষ্ট্য* ইসলামের ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে খাওয়ারিজদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে, যা তাদের মতবাদ ও কার্যকলাপের প্রকৃতি প্রতিফলিত করে। ১. الحرورية (আল-হারুরিয়াহ) এই নাম তাদের দেওয়া হয়েছিল, যারা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সেনাবাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কুফার নিকটবর্তী হারুরা নামক স্থানে একত্র হয়েছিল। ইমাম আবুল হাসান আশআরি রহিমাহুল্লাহ তাঁর মাকালাতুল আশআরি গ্রন্থে লিখেছেন যে, তাদের “আল-হারুরিয়াহ” নামে অভিহিত করা হয়েছিল, কারণ তাদের আন্দোলনের সূচনা হারুরা নামক স্থানে হয়েছিল। ২. الشُّراة (আশ-শুরাত) খারিজিরা নিজেদের জন্য “আশ-শুরাত” (আত্মবিক্রিতগণ) উপাধি গ্রহণ করেছিল, কেননা তাদের দাবি ছিল, তারা নিজেদের জান-মাল ও অস্তিত্বকে আল্লাহর সন্তুষ্টির বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে। ইমাম আশআরি রহিমাহুল্লাহ তাঁর মাকালাতুল আশআরি গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেছেন— তাদের এই নামকরণের ভিত্তির পেছনে এই বিশ্বাস ছিল যে, তারা নিজেদের জান্নাতের বিনিময়ে বিক্রয় করে দিয়েছে। ৩. المارقة (আল-মারিক্বাহ) যখন খাওয়ারিজরা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সেনাবাহিনী থেকে পৃথক হয়ে বিদ্রোহ করল, তখন তাদের “আল-মারিক্বাহ” নামে আখ্যায়িত করা হয়। শহরিস্তানি রহিমাহুল্লাহ তাঁর আল-মিলাল ওয়ান-নিহাল গ্রন্থে লিখেছেন যে, তারা ছিল সেই বিদ্রোহী দল, যারা নাহরওয়ান প্রান্তরে একত্র হয়েছিল এবং উগ্র মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর অনমনীয়তা প্রদর্শন করেছিল। ৪. المُحَكِّمة (আল-মুহাক্কিমাহ) এই উপাধি তাদের দেওয়া হয়েছিল যখন তারা সালিসি (মীমাংসা) ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করে ঘোষণা করেছিল— “লা হুকমা ইল্লা লিল্লাহ” (শাসনক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত)। ইমাম আশআরি রহিমাহুল্লাহ তাঁর মাকালাতুল ইসলামিয়্যিন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, তাদের এই নামকরণের কারণ ছিল রাজনৈতিক সালিসি ব্যবস্থার প্রত্যাখ্যান এবং উগ্র মতবাদের ওপর কঠোর অনড়তা। এ সকল উপাধির মধ্যে “আল-মারিক্বাহ” নামে তারা নিজেদের অভিহিত করতে চাইত না, কারণ এর অর্থ “দীন থেকে বিচ্যুত”। ইমাম আবুল হাসান আশআরি রহিমাহুল্লাহ লিখেছেন যে, তারা এই নামকে নিজেদের জন্য অপমানজনক মনে করত এবং কখনোই তারা এটিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেনি। — *খারিজি মতবাদের উৎপত্তি ও বিস্তার* খারিজি মতবাদের উৎপত্তি নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। ১. প্রথম মত কিছু গবেষক মনে করেন, খাওয়ারিজদের আদি প্রবক্তা ছিল যুল-খুওয়াইসিরাহ বা আব্দুল্লাহ ইবন যুল-খুওয়াইসিরাহ আত-তামিমি। সে গনিমতের বণ্টন সংক্রান্ত বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায়বিচার ও আদর্শিক ভারসাম্যের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল। ইমাম বুখারি রহিমাহুল্লাহ তাঁর সহিহ বুখারি গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন— একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনিমতের সম্পদ বণ্টন করছিলেন। তখন যুল-খুওয়াইসিরাহ বলে উঠল: > “হে আল্লাহর রাসূল, ইনসাফ করুন!” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: > *“যদি আমি ন্যায়বিচার না করি, তবে আর কে করবে?”* তখন হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে হত্যা করতে চাইলেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: > *“তাকে ছেড়ে দাও। কারণ, তার বংশধরদের মধ্য থেকে এমন একদল আত্মপ্রকাশ করবে, যাদের নামায ও রোযা দেখে তোমরা নিজেদের ইবাদতকে তুচ্ছ মনে করবে, কিন্তু তারা দীন থেকে এমনভাবে বিচ্যুত হবে, যেমন তীর শিকার বিদ্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে যায়।”* এই হাদিসের আলোকে কিছু গবেষক মনে করেন, যুল-খুওয়াইসিরাহ ছিলেন খারিজি মতবাদের প্রথম অনুগামী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হত্যা করতে নিষেধ করেছিলেন, যেন মানুষ ধারণা না করে যে, তিনি কেবলমাত্র তাঁর বিরোধীদের নির্মূল করেন। — ২. দ্বিতীয় মত কাজী আলী ইবনু আবিল ইয্ আল-হানাফি আদ-দিমাশকী রহিমাহুল্লাহ তাঁর শরহুল আকিদাতিত ত্বাহাওয়িয়্যাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, খারিজিরা প্রথম আত্মপ্রকাশ করে সেই ভয়াবহ ফিতনার সময়, যে ফিতনা হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয় এবং তাঁর শাহাদাতের মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। — ৩. তৃতীয় মত অনেক ঐতিহাসিকের মতে, খারিজিদের প্রকৃত উত্থান ঘটে তখন, যখন তারা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাহিনী থেকে পৃথক হয়ে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে। এই মত অধিক প্রচলিত এবং ইতিহাসবিদদের মধ্যে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। ইমাম আশআরি রহিমাহুল্লাহ খারিজিদের ইতিহাস সম্পর্কে বলেন— > “তাদের খারিজি বলা হয়, কারণ তারা হযরত আলী ইবনু আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল।” এরপর থেকে “খারিজি” উপাধিটি এমনভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে যে, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘটনা ব্যতীত এই নামের প্রকৃত তাৎপর্য বাকি থাকে না।

https://almirsadbd.com/almirsad-au-vi-cr-j-t-n-w-m-ch-k/ *আল মিরসাদ অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্টের জন্য তাদের নতুন ওয়েবসাইট “মীক্বাত” চালু করেছে* আল মিরসাদ নিউজ ডেস্ক আল মিরসাদ কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত আনন্দের সাথে ঘোষণা করছে যে, তারা তাদের নতুন ওয়েবসাইট “মীক্বাত” উদ্বোধন করেছে, যা বিশেষভাবে অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্টের জন্য নিবেদিত। এখন থেকে আল মিরসাদ সম্পর্কিত সকল অডিও-ভিজ্যুয়াল উপকরণ এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজে প্রকাশিত হবে। তদুপরি, মীক্বাত ওয়েবসাইটটি গত দুই দশকের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে চলমান সংগ্রামের অডিও-ভিজ্যুয়াল উপকরণের একটি বিশাল সংগ্রহশালায় পরিণত হবে। বিশ্বস্ত ও স্বীকৃত স্টুডিওগুলো— যেমন আল-ইমারাহ, আল-হিজরাহ, মানবা’ আল-জিহাদ এবং অন্যান্য স্টুডিওগুলোর এপিসোডসমূহ নিয়মিতভাবে এই ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে, যাতে দর্শকরা সহজে এবং দ্রুত এসব মূল্যবান উপকরণ উপভোগ করতে পারেন। এছাড়াও মীক্বাত তার শ্রোতাদের জন্য একটি বিশেষ বিভাগ তৈরি করেছে, যেখানে কবিতা এবং নাশীদগুলোর সমৃদ্ধ সংগ্রহ উপস্থাপন করা হবে। এই সেকশনটিতে বিভিন্ন ভাষায় নাশীদ এবং সংগীত পরিবেশন করা হবে, যা শ্রোতাদের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। এটি উল্লেখযোগ্য যে, মীক্বাত তার অডিও-ভিজ্যুয়াল উপকরণের সংগ্রহ আরও বিস্তৃত করতে এবং তার দর্শকদের বৈচিত্র্যময় আগ্রহের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিতে অবিরত কাজ করে যাবে। ওয়েবসাইটটি পরিদর্শন করুন: https://miqath.com/

https://almirsadbd.com/khdr-p-1st/ *খাওয়ারিজদের পরিচয়* [ প্রথম পর্ব ] ✍🏻 রাশেদ শফীক খাওয়ারিজরা এক মতবাদ-নির্ভর আদর্শিক সম্প্রদায়, যাদের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় রক্তক্ষয়ী মতানৈক্যমূলক সংঘাতে রঞ্জিত। ইসলামের প্রভাতযুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত এদের চিন্তাধারা বিভিন্ন উগ্রপন্থী আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। আধুনিক দুনিয়ায় তথাকথিত দাঈশের মতাদর্শেও খারিজি মানসিকতার গভীর প্রভাব প্রতিফলিত হয়। *খুরূজ (الخروج) ও খাওয়ারিজ (الخوارج)–এর সংজ্ঞার ভাষ্যে বিশিষ্টজনের দৃষ্টিভঙ্গি* *খুরূজ (الخروج):* শাব্দিক অর্থ প্রস্থান, বের হওয়া, বিদ্রোহ করা। পরিভাষায়, মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে বিদ্রোহ করাকে “খুরূজ” বলা হয়। *খাওয়ারিজ (الخوارج):* “খুরূজ”–এর বহুবচন, অর্থ বিদ্রোহীরা। ইসলামের ইতিহাসে, তারা সেই গোষ্ঠী যারা চতুর্থ খলিফা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং চরমপন্থী মতবাদ গ্রহণ করে। ১. ইমাম শাফেয়ী (رحمه الله): > ”الخوارج هم الذين يعتمدون على تفسير القرآن والسنة تفسيراً متشدداً بغير دليل، مما يؤدي إلى تفريق وحدة الأمة الإسلامية.“ অর্থ: খারিজিরা সেই সম্প্রদায়, যারা কোনো গ্রহণযোগ্য দলিল বা ব্যাখ্যাগত অনুমোদন ব্যতিরেকে কুরআন ও সুন্নাহকে কঠোরভাবে ব্যাখ্যা করে এবং যার ফলশ্রুতিতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিদীর্ণ হয়। --- ২. আল্লামা আবুল হাসান আশ'আরী (رحمه الله): > ”الخوارج هم الذين يكفرون المسلمين بالذنوب والمعاصي، ويرون وجوب الخروج على أئمة المسلمين إذا وقعوا في الذنب.“ অর্থ: খারিজিরা সেই গোষ্ঠী, যারা পাপ ও গুনাহকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বিচ্যুতির মানদণ্ডরূপে বিবেচনা করে এবং এই যুক্তিতে মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও সশস্ত্র প্রতিরোধকে আবশ্যক মনে করে। --- ৩. ইতিহাসবিদ ও মুফাসসির ইবনুল আসীর (رحمه الله): > ”الخوارج فرقة ظهرت في التاريخ الإسلامي، قامت بتكفير المسلمين والخروج على الحكام بسبب تأويلاتهم المتشددة.“ (الكامل في التاريخ) অর্থ: খারিজিরা ইসলামের ইতিহাসে এমন এক গোষ্ঠী, যারা তাদের কঠোর ব্যাখ্যা ও যুক্তিকাঠামোর ওপর নির্ভর করে মুসলিমদের ওপর কুফরের ফতোয়া জারি করেছে এবং শাসকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছে। --- ৪. আল্লামা শাহরিস্তানী (رحمه الله): > ”كل من خرج على الإمام الحق الذي اتفقت عليه الأمة يسمى خارجياً، سواء كان ذلك في عهد الخلفاء الراشدين أو بعدهم.“ (الملل والنحل) অর্থ: যে-ই ব্যক্তি মুসলিম উম্মাহ কর্তৃক স্বীকৃত ন্যায়সঙ্গত ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, সে-ই খারিজি বলে অভিহিত হবে, তা সে খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে হোক বা তৎপরবর্তী সময়ে হোক। --- *খাওয়ারিজ মতাদর্শের মূল উপাদান* শাস্ত্রবিদগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, যে ব্যক্তি খারিজিদের চিন্তাধারা ধারণ করে কিংবা তাদের কার্যকলাপ অনুসরণ করে, সে-ই তাদের অন্তর্ভুক্ত। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো তাদের অন্যতম নীতি: تحكيم (তাহকীম) প্রত্যাখ্যান: সালিশ গ্রহণ ও বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কুরআনি নীতির বিপরীতে অবস্থান। تكفير بالكبائر (কবিরাহ গুনাহের কারণে তাকফির): যারা কবিরাহ গুনাহে লিপ্ত হয়, তাদের ইসলামের গণ্ডির বাইরে গণ্য করা। الخروج على الحكام (শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ): শাসকের সীমালঙ্ঘনের কারণে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা বাধ্যতামূলক মনে করা। الخلود في النار (চিরস্থায়ী জাহান্নামের বিশ্বাস): কবিরাহ গুনাহকারীদের অনন্তকালের জন্য জাহান্নামী মনে করা ও অভিশাপ দেয়া। --- *”الخوارج“ (খারিজি) শব্দের প্রেক্ষিতে* ১. ইতিবাচক প্রেক্ষাপট: যদি “খারিজি” শব্দটি নিচের বরকতময় আয়াত থেকে গৃহীত হয়— > ”وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ“ (سورة النساء: 100) অর্থ: “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করার উদ্দেশ্যে তার ঘর থেকে বের হয়, অতঃপর মৃত্যুবরণ করে, তবে তার প্রতিদান আল্লাহর কাছে অবশ্যই নির্ধারিত।”— তবে এই নামটি প্রশংসনীয় অর্থ বহন করবে। খারিজিরা নিজেদের কার্যকলাপের বৈধতা প্রতিষ্ঠার জন্য এই শব্দের এমন ব্যাখ্যা প্রচার করেছিল। ২. নেতিবাচক প্রেক্ষাপট: কিন্তু যদি এই নামটি রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরোধিতা ও ইসলামী শৃঙ্খলাকে ধ্বংস করার প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়, তবে এটি নিঃসন্দেহে নিন্দাসূচক হবে। অধিকাংশ শাস্ত্রবিদ এই অর্থেই “খারিজি” শব্দের ব্যবহার করেছেন। --- *খারিজিদের সম্পর্কে হাদিসসমূহ* “ফাতহুল বারী”–তে রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর খারিজিদের সম্পর্কে একাধিক সতর্কবার্তা সংকলিত হয়েছে। ১. উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ (رضي الله عنها) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: > ”هُم شِرَارُ أُمَّتِي، يَقتُلُهُم خِيَارُ أُمَّتِي.“ (البزار) অর্থ: “তারা আমার উম্মতের নিকৃষ্টতম লোক, আর আমার উম্মতের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিরা তাদের হত্যা করবে।” --- ২. আবদুল্লাহ ইবনু আবি আওফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: > "الخوارج كلاب النار." (ابن الجوزي) অর্থ: “খারিজিরা জাহান্নামের কুকুর।”

https://almirsadbd.com/r-sawr-zj-mjr-j-sh-3rd/ *রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর যুদ্ধজীবন: মানবজাতির জন্য শিক্ষা* [তৃতীয় পর্ব] ✍🏻 আবু রাইয়ান হামিদী দ্বিতীয়: গাযওয়াতু বুওয়াত গাযওয়াতের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় গাযওয়া হলো বুওয়াত, যা হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে রবিউল আউয়াল বা রবিউস সানি মাসে সংঘটিত হয়। ওহীর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সংবাদ প্রদান করা হয় যে, উমাইয়া ইবনু খালাফের নেতৃত্বে কুরাইশের একটি বাণিজ্য কাফেলা মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। নবী করিম ﷺ দুই শত অশ্বারোহী সাহাবির একটি সুসজ্জিত বাহিনী নিয়ে কাফেলাটিকে প্রতিহত করার সংকল্প করেন এবং বুওয়াত অঞ্চলের অভিমুখে গমন করেন। এই গাযওয়াহয় ইসলামী পতাকা ছিল শুভ্র, আর তার বাহক নিযুক্ত হয়েছিলেন হযরত সা‘দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তবে কাফেলাটি আগেই পথ পরিক্রমণ করায় কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি, এবং মুসলিম বাহিনী কোনো সংঘর্ষ ব্যতীতই মদিনায় প্রত্যাবর্তন করে। এ সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনার রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব অর্পণ করেন হযরত সায়েব ইবনু মাযউন রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর, যিনি ইসলামের প্রারম্ভিক যুগের সম্মুখসারির সাহাবিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বুওয়াত এক পর্বতের নাম, যা মক্কা হতে শামগামী দীর্ঘ পথের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং মদিনা মুনাওয়ারার প্রায় ৪৮ মাইল দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত। --- তৃতীয়: গাযওয়াতুল ‘উশায়রা সিরাত বিশেষজ্ঞদের মতে, গাযওয়াতুল ‘উশায়রা ইসলামের সামরিক অভিযানের ধারাবাহিকতায় তৃতীয় গাযওয়া। এটি ছিল নবী করিম ﷺ-এর নেতৃত্বে পরিচালিত তৃতীয় সেনা অভিযান, যাতে দুই শত মুহাজির সাহাবি অংশগ্রহণ করেন। এই অভিযান সংঘটিত হয় হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে, যখন কুরাইশের একটি বাণিজ্য কাফেলা শামের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, আর মুসলিম বাহিনী মদিনা থেকে যাত্রা করে ‘উশায়রা অঞ্চলে গমন করে। যাত্রাপথে তাঁরা ইবনু আজহারের মরুপ্রান্তরে এক বিশাল বৃক্ষতলে অবকাশ গ্রহণ করেন, সেখানে আহার পর্ব সম্পন্ন করেন এবং সালাত আদায় করেন। অতঃপর তাঁরা ইয়ালিল নামক স্থানে বিরতি গ্রহণ করেন এবং পরিশেষে ‘উশায়রায় উপনীত হন। মদিনায় অনুপস্থিতির সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রশাসনিক দায়িত্ব অর্পণ করেন হযরত আবু সালামা ইবনু আবদুল আসাদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর। তবে কাফেলাটি আগেই নির্ধারিত পথ পরিক্রমণ করায় যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। তবে এই অভিযানে মুসলিম বাহিনী বনু মুদলিজ গোত্রের সঙ্গে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করে এবং অতঃপর মদিনায় প্রত্যাবর্তন করে। উল্লেখ্য, এটিই সেই কাফেলা, যা পরবর্তী সময়ে শাম থেকে মক্কায় প্রত্যাবর্তনের পথে মুসলিমদের লক্ষ্যবস্তু হয় এবং ফলস্বরূপ ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ যুদ্ধ ‘বদর’ মহাযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে। --- একটি সংশয় ও তার নিরসন এই তিন গাযওয়াহর উদ্দেশ্য ছিল কুরাইশদের কাফেলাগুলোর গতিপথ প্রতিহত করা, যা কখনো মক্কা থেকে শামের দিকে অগ্রসর হতো, আবার কখনো শাম থেকে মক্কার দিকে প্রত্যাবর্তন করত। ইসলামবিরোধীরা এ বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করে বলেন, কেন রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবিগণ ব্যবসায়িক কাফেলাগুলোর গতিরোধ করলেন? তারা এটিকে ইসলামি নীতির পরিপন্থী হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। এই আপত্তির খণ্ডন এই যে— রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবিগণ কুরাইশদের সীমাহীন অত্যাচার ও নিপীড়নের শিকার হয়ে মক্কা থেকে বলপ্রয়োগে বিতাড়িত হয়েছিলেন। তাঁদের সমগ্র সম্পদ, আবাসভূমি ও খেত-খামার অন্যায়ভাবে কুরাইশরা আত্মসাৎ করেছিল। সুতরাং, এই গাযওয়াহগুলো মূলত তাঁদের আত্মসাৎকৃত সম্পদের পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা ছিল অথবা ক্ষতিপূরণ আদায়ের প্রয়াস ছিল। এটি কোনো অন্যায় আক্রমণ বা কারও সম্পদের প্রতি অবৈধ আগ্রাসন ছিল না। এই কারণেই বদরের যুদ্ধ পর্যন্ত সংঘটিত সমস্ত গাযওয়াহয় কেবল মুহাজির সাহাবিরাই অংশ নিয়েছিলেন, আনসারদের কোনো ভূমিকা ছিল না। কারণ, এই যুদ্ধ ছিল কেবল কুরাইশ ও মুহাজির মুসলিমদের মধ্যকার একটি ন্যায়সংগত সংগ্রাম, যেখানে মুহাজিরগণ তাঁদের আত্মমর্যাদা, ধর্মবিশ্বাস ও আত্মসাৎকৃত সম্পদের পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করছিলেন।

https://almirsadbd.com/a-qr-ove-b-fe-9-d-n-os-j/ *আল কায়েদার অভিযানে বুর্কিনা ফাসোতে ৯ দাঈশী নিহত এবং অস্ত্রশস্ত্র জব্দ* আল মিরসাদ নিউজ ডেস্ক আল কায়েদার মুজাহিদীন আফ্রিকার রাষ্ট্র বুর্কিনা ফাসোতে এক সংঘর্ষে দাঈশী খাওয়ারিজদের হত্যা করে তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে। জামাআতু নুসরাতিল ইসলামি ওয়াল মুসলিমীনের (JNIM) মুখপত্র আয-যাল্লাকাহ গত পরশু, শুক্রবার ১লা শাবান, এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করে। উক্ত বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয় যে, মুজাহিদীন উওদালা প্রদেশের ওকা ও সাসমাকের মধ্যবর্তী অঞ্চলে দাঈশী বাহিনীর ওপর এক সুপরিকল্পিত অভিযান পরিচালনা করে, যার পরিণতিতে ৯ জন দাঈশী নিহত হয়। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, নিহতদের নিকট হতে একটি পেকা মেশিনগান, পাঁচটি কালাশনিকভ রাইফেল ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধসরঞ্জাম সংহত করা হয়েছে। এর আগে উওদালা প্রদেশেই আল কায়েদার মুজাহিদীন এক ওতপ্রতিহতের মাধ্যমে দাঈশীদের নিঃশেষ করেছিল। জামাআতু নুসরাতিল ইসলামি ওয়াল মুসলিমীন পশ্চিম আফ্রিকার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড— মালি, বুর্কিনা ফাসো ও নাইজারে আল কায়েদার অন্যতম সক্রিয় শাখা হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং মাগরিবের আল কায়েদা শাখার অন্তর্ভুক্ত থেকে নিজের কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছে।