
Almirsad বাংলা
1.8K subscribers
About Almirsad বাংলা
আল মিরসাদ— বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামের সুদৃঢ় ময়দান
Similar Channels
Swipe to see more
Posts

https://almirsadbd.com/i-shby-kdr-s-lr-n-1 *ইসলামী শাসনব্যবস্থায় কাফিরদের সঙ্গে লেনদেনের নীতিমালা* [ প্রথম পর্ব ] ✍🏻 বশীর বারান এই রচনাটি এমন এক সময়ে রচিত হচ্ছে, যখন দুর্ভাগ্যবশত কিছু মুসলিম রাষ্ট্র সম্পর্ক গড়ে তুলেছে আমেরিকার সঙ্গে, যেগুলোর ভিত্তি কেবল অর্থনৈতিক স্বার্থে স্থাপিত। এসব রাষ্ট্র তাদের সামরিক শক্তিকে আধুনিকায়িত ও সুসজ্জিত করার লক্ষ্যে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রভাণ্ডার সংগ্রহের আশায় উদ্বাহু। অথচ অপরদিকে, গাযযা সেই একই রাষ্ট্র আমেরিকার নির্মিত আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির আঘাতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের শিকার হয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে মৃত্যুর দ্বারে এসে পৌঁছেছে। এই বাস্তবতা স্বীকার করে বলা যায়, বর্তমান বিশ্বে কুফফার রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে একটি ইসলামী শাসনব্যবস্থার সম্পর্ক স্থাপন এক অনিবার্য প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই প্রয়োজন পূরণের পথে কোনো অবস্থাতেই ইসলামী ব্যবস্থার আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্য বিলীন বা অবমানিত হওয়া চলবে না। বরং এখানে অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায় স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা ও জনগণের সম্মতির সংবেদনশীলতা। যখনই কোনো ইসলামী রাষ্ট্র কাফির রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চিন্তা করবে, তখন সর্বাগ্রে অপরিহার্য হবে যে, ইসলামী শাসনের পররাষ্ট্রনীতি ও তার ঐতিহাসিক ভিত্তির প্রতি এক নিবিড় প্রত্যাবর্তন ঘটানো হোক। এ প্রসঙ্গে অন্ধ অনুকরণ কিংবা পশ্চিমা ও আন্তর্জাতিক চুক্তিসমূহের অন্ধ অনুসরণ কেবল নিপীড়ন ও দাসত্বের দিকেই ধাবিত করবে। সেই বিবেচনায় নিম্নোক্ত তিনটি মৌলিক বিষয়ে সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা অপরিহার্য: ইসলামী মূল্যবোধ ও নীতিমালার সংরক্ষণ ইসলাম ও তার চিরন্তন মূল্যবোধের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষার প্রশ্নটি এক অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যার জন্য যুগে যুগে লক্ষ লক্ষ মু’মিন নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কুরআন, হাদীস ও ইসলামী ফিকাহে এ বিষয়ে অজস্র দিকনির্দেশনা সন্নিবদ্ধ। সুতরাং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামী নীতিমালা ও মূল্যবোধই সর্বোচ্চ প্রাধান্য লাভ করবে— এমনটি নিশ্চিত করাই ইসলামী সমাজ ও উম্মতের সম্মান রক্ষার একমাত্র পথ। শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্থাপত্য সম্পর্ক ও চুক্তির পেছনে যে মৌলিক উদ্দেশ্যসমূহ সক্রিয় থাকে, সেগুলোর অন্তর্গত একটি মুখ্য উদ্দেশ্য হলো শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জন। তবে এই শান্তি হতে হবে কল্যাণমূলক প্রেক্ষাপটে; এমন নয় যে তা মুসলিম সমাজকে দাসত্বে বন্দি করে কিংবা বৈদেশিক প্রভুত্বের অধীন করে। কোনো শান্তির নাম করে যদি স্বাতন্ত্র্য বিসর্জনের দাবি ওঠে, তবে সে শান্তি ইসলামে কখনো বৈধতা পেতে পারে না। যেমনটি দেখা গেছে, আমেরিকার দখলদারিত্বের সময় ‘নিরাপত্তা চুক্তি’ এবং ‘স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপন’— এই সবকিছুর অজুহাতে বলা হয়েছিল যে, এর দ্বারা আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। তখনকার কাবুল প্রশাসন এসব চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেছিল। কিন্তু ফলাফল সুস্পষ্ট, শান্তি তো কায়েম হয়নি, বরং যখন ইসলামী ইমারাতের মুজাহিদীনরা প্রতিরোধের ময়দানে অবতীর্ণ হন, তখনই সে প্রশাসনের ভিত্তি কেঁপে উঠে এবং তারা লজ্জিতভাবে পরাস্ত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। পারস্পরিক বৈধ স্বার্থের সংরক্ষণ প্রতিটি সম্পর্কের ভিত্তিই হলো স্বার্থের রক্ষা ও পরিপূরণ। কিন্তু যখন কোনো ইসলামী রাষ্ট্র অমুসলিম জাতি বা ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, তখন তার ভিত্তি হতে হবে শরঈ ও ন্যায্য স্বার্থে। এই সম্পর্কের মাত্রা নির্ধারিত হবে ইসলামের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সীমারেখার মধ্যে। ইসলামী রাষ্ট্র যেন তাদের ওপর অন্যায় কিছু চাপিয়ে না দেয়, আর তারাও যেন এমন কোনো শর্ত আরোপ না করে, যা ইসলামি সমাজের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এখন আমরা এই আলোচনার প্রেক্ষিতে ইসলামের ঐতিহাসিক অভিমুখ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ধারা পর্যালোচনা করব। ইসলাম এক বৈশ্বিক জীবনব্যবস্থা এবং বিশ্বজনীন নীতিনির্ভর ধর্ম। ইসলাম এমন এক মানবতা-ভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখে, যেখানে মানুষ কেবল মানবীয় বা মনুষ্যনির্মিত আইন নয়, বরং একমাত্র আল্লাহর বিধানের অনুসারী হয়ে জীবন পরিচালনা করবে। ইসলামের পরিধিতে জাতি, অঞ্চল কিংবা বংশগৌরব কোনো প্রাধান্য পায় না। এখানে মূল মানদণ্ড হলো শাশ্বত নীতিমালার প্রতি নিষ্ঠাবান আনুগত্য। নেতৃত্ব সেই ব্যক্তিবর্গের হাতে থাকা উচিত, যারা আল্লাহর আনুগত্যে বিশ্বাসী এবং তাঁর বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা করে— এমন না যে তারা স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হয়। এই আদর্শ প্রতিষ্ঠার নিমিত্তেই রাসূলুল্লাহ ﷺ আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছিলেন। তাঁর ঈমান, দৃঢ় সংকল্প, আল্লাহর প্রতি অগাধ নির্ভরতা এবং আত্মবিশ্বাস— এই চারটি ভিত্তিই নববী কূটনীতির মূলস্তম্ভ। তিনি ﷺ নবুয়তের যুগে দীনী আদর্শ ও নীতিমালাকে মানবিক মর্যাদা ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে ভবিষ্যৎ উম্মতের জন্য এক সুগভীর নীতির ভিত নির্মাণ করে দিয়ে গেছেন। ইসলাম: একটি সমাজকাঠামো ও আইনপ্রবাহী জীবনব্যবস্থা ইসলাম একটি সমাজকেন্দ্রিক ধর্ম, যার প্রতিটি বিধান একটি সুসংহত নীতিনির্ভর কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত। একজন মুসলিমের আল্লাহর সঙ্গে কিংবা অন্য মানুষের সঙ্গে সকল প্রকার সম্পর্ক ইসলামের বিধিবিধানের অধীনেই আবদ্ধ। সুতরাং ইসলাম কেবল একটি ধর্মীয় বা নৈতিক জীবনদর্শন নয়, বরং একটি পরিপূর্ণ আইনতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থা। ইসলামের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিই তার সম্পর্কনীতি তথা কূটনৈতিক ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য। এ দৃষ্টিকোণ থেকেই ইসলাম মানব প্রকৃতির উপযোগী একটি পূর্ণাঙ্গ ও বাস্তবমুখী বিধান হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে।

https://almirsadbd.com/r-sawr-zj-mj-j-sh-16/ *রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর যুদ্ধজীবন: মানবজাতির জন্য শিক্ষা* [ ষোড়শ পর্ব ] ✍🏻 আবু রাইয়ান হামিদী গাযওয়ায়ে বদর থেকে আহরণযোগ্য শিক্ষাসমূহ গাযওয়ায়ে বদর থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আরও কিছু উপদেশ ও শিক্ষা পাঠকদের সম্মুখে তুলে ধরছি— ৫. শরিয়তের দৃষ্টিতে জিহাদ একটি স্থায়ী ও স্পষ্ট বিধান, যা মাদানী যুগের একটি বৃহৎ অংশকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। তবে স্মরণে রাখা আবশ্যক যে, শান্তি ও সন্ধিচুক্তিও শরিয়তের চোখে নাজায়েয নয়। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বহু গাযওয়ায় জিহাদের পাশাপাশি শান্তির কৌশলও অবলম্বন করেছেন। একজন ইমাম বা শাসকের কর্তব্য হলো— সে মুসলিমদের অবস্থা ও স্বার্থ সর্বদিক থেকে মূল্যায়ন করবে, শত্রুদের অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করবে, এবং যদি তার বিচারে মসলাহাত শান্তিতে নিহিত থাকে, তবে সে সন্ধিতে প্রবৃত্ত হতে পারে; আর যদি মসলাহাত জিহাদে নিহিত থাকে, তবে সে জিহাদই বেছে নেবে। অতএব, শরিয়তে শান্তিকে জিহাদের পরিপন্থী বলা যায় না; বরং একে জিহাদেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে গণ্য করা যায়। শাসক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গুণী আলেম ও সুবিজ্ঞ মুসলিমদের সঙ্গে পরামর্শ করবে, এবং সেই পরামর্শের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ গ্রহণ করবে— শর্ত একটাই, পরামর্শ যেন কুরআন ও সুন্নাহর নসের পরিপন্থী না হয়। ৬. একজন মু’মিনের বিশ্বাস হওয়া উচিত যে মৃত্যু একটি নির্ধারিত সময়েই সংঘটিত হবে। অতএব, তাকে সাহসিকতা অবলম্বন করে কাফিরদের মোকাবেলায় গৌরবজনক ভূমিকা রাখতে হবে। হয় সে বিজয়ী হয়ে মর্যাদার সঙ্গে জীবন যাপন করবে, নয়তো শাহাদতের অমর সৌভাগ্যে ধন্য হবে, যা একজন মু’মিনের জীবনের চূড়ান্ত কামনা। গাযওয়ায়ে বদরের এই নিরস্ত্র, স্বল্পসংখ্যক এবং সামরিক শক্তিহীন সেনাবাহিনী যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে সাহস ও আত্মমর্যাদার বাণী শুনছিল, তখন সেই আহ্বান গোটা উম্মতের প্রতিও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছিল। ৭. একজন মুসলিম সেনাপতির কর্তব্য, যুদ্ধের পূর্বে শত্রুর অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা, তার শক্তি ও গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত হওয়া। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ নীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন, এমনকি তিনি ব্যক্তিগতভাবেও শত্রু পর্যবেক্ষণে অগ্রসর হতেন। ৮. সেনাপতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো, নিজের সামরিক কৌশলকে গোপন রাখা। কা’ব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক গাযওয়াকে গোপন রাখতেন, অর্থাৎ প্রকাশ্যে ঘোষণা করতেন না। গাযওয়ায়ে বদরেও তিনি এ নীতিই অনুসরণ করেছিলেন। এর কয়েকটি দৃষ্টান্ত সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো: (ক) এক বৃদ্ধ যখন জিজ্ঞাসা করলেন: “তোমরা কারা?” রাসূলুল্লাহ ﷺ উত্তর দিলেন: “نحن من الماء”— “আমরা পানিসঞ্জাত।” যদি তিনি বলতেন—“আমরা মুসলিম,” তবে শত্রুরা তাঁর অবস্থান ও বাহিনীর শক্তি সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে পারত। (খ) হযরত আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত— বদরের দিনে রাসূলুল্লাহ ﷺ আদেশ দিয়েছিলেন যাতে উটের ঘন্টাগুলি খুলে ফেলা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল শত্রুর যেন কোনোভাবেই মুসলিম বাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে ধারণা না হয়। (গ) যখন মুসলিম বাহিনী বদরের দিকে যাত্রা করছিল, রাসূলুল্লাহ ﷺ স্পষ্ট করে বলেননি যে আমরা বদরের দিকে যাচ্ছি। বরং তিনি বললেন, "একটি কাজ রয়েছে, যিনি প্রস্তুত, তিনি সওয়ার হোন।" এ থেকে প্রতীয়মান হয়, যুদ্ধের পরিকল্পনা গোপন রাখা অপরিহার্য। কেবলমাত্র ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা বা সহকারী ব্যতীত কাউকে অবহিত করা অনুচিত— এটিই নববী পন্থা। ৯. হযরত হুবাব ইবন মুনযির রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরামর্শ এবং তাঁর নম্র ও বিনীত ভাষা এক উত্তম, পরিচ্ছন্ন এবং ভারসাম্যপূর্ণ ইসলামী চরিত্র গঠনের দৃষ্টান্ত। তিনি জিজ্ঞাসা করেন: “হে আল্লাহর রাসূল ﷺ! যদি এই স্থান নির্ধারণ ও অবস্থান ওহীর নির্দেশে নির্ধারিত হয়, তবে আমরা এখানে অবস্থান করব। কিন্তু যদি এটি মানবীয় কৌশলের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, তবে অনুরোধ করছি— চলুন আরও একটু অগ্রসর হয়ে সঠিক স্থানে অবস্থান করি।” এই বাক্যসমূহ আনুগত্য, শিষ্টাচার ও মত প্রকাশের এক শ্রেষ্ঠ শিক্ষারূপে উম্মতকে শেখায়, কীভাবে নেতা ও আমিরের সম্মুখে সম্মান ও ভাবগম্ভীরতার সঙ্গে মত প্রকাশ করতে হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ সমস্ত সাহাবার মতামত মনোযোগ সহকারে শুনতেন— যদিও বিষয়টি অত্যন্ত জটিল বা সংকটাপন্ন হতো। হুবাব ইবন মুনযির রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রস্তাব এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে প্রদত্ত হয়, এবং যেহেতু তা যুক্তিসম্মত ও দূরদর্শী ছিল, তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ তা গ্রহণ করেছিলেন। একটি আপাত-সন্দেহ এবং তার জবাব: কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, হযরত আবু বকর ও হযরত উরার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মতামত থাকা সত্ত্বেও, রাসূলুল্লাহ ﷺ কেন তাদের বক্তব্যে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হননি? কেন তিনি আনসারদের মতামত নেওয়াকে অপরিহার্য মনে করলেন? উত্তর এই যে— রাসূলুল্লাহ ﷺ ও আনসারদের মধ্যে সম্পাদিত বাই‘আ (চুক্তি)-তে এমন কোনো শর্ত ছিল না যে, আনসাররা মদীনার বাইরে সংঘটিত যুদ্ধে অংশগ্রহণে বাধ্য থাকবেন। অতএব, তিনি চাইলেন, তাদের কাছ থেকে সরাসরি সম্মতি নেওয়া হোক এবং এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে জেনে নেওয়া হোক তাঁরা এ যুদ্ধে রাজি কি না। আর এই পবিত্র ও উৎসর্গপ্রবণ আনসারদের দল ঠিক সেই একনিষ্ঠতা প্রদর্শন করল, যেমনটি হিজরতের সূচনালগ্নে করেছিল। তাদের প্রাণস্পর্শী বক্তব্য এমন ছিল, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর হৃদয়ে প্রশান্তি ও স্থিরতা দান করল। তাঁরা বললেন: আমাদের চুক্তি আপনার সঙ্গে নয়, বরং আল্লাহ জাল্লা জালালুহুর সঙ্গে; আমরা সবসময় আল্লাহর পথে প্রাণ বিসর্জনে প্রস্তুত থাকব, এবং ইসলামী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে উত্থাপিত প্রতিটি চ্যালেঞ্জের জবাব তলোয়ারের দীপ্তিতে দেব।

https://almirsadbd.com/r-sawr-zj-mj-j-sh-17/ *রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর যুদ্ধজীবন: মানবজাতির জন্য শিক্ষা* [ সপ্তদশ পর্ব ] ✍🏻 আবু রাইয়ান হামিদী গাযওয়ায়ে বদর থেকে আহরিত শিক্ষার ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আরও কয়েকটি শিক্ষাবোধক উপদেশ ও গভীর অন্তর্দৃষ্টি পাঠকের সম্মুখে নিবেদন করছি। ১০. গাযওয়ায়ে বদরের বিজয়ের রহস্য— ইমান বনাম বস্তুবাদ যদি আমরা গাযওয়ায়ে বদরে অংশগ্রহণকারী মুসলিম ও কাফির বাহিনীর পরিসংখ্যান এবং সমরাস্ত্রের তুলনামূলক চিত্র পর্যালোচনা করি, তবে অনেকের মনেই এ প্রশ্ন উদিত হতে পারে— এই বিজয় কীভাবে সম্ভবপর হলো? সেই মৌলিক উপাদানসমূহই বা কী ছিল, যেগুলোর ভিত্তিতে এই অনন্যসাধারণ বিজয় সাধিত হয়েছিল? উত্তর অত্যন্ত স্পষ্ট। এটি ছিল বিশ্বাস ও বস্তুবাদের মধ্যকার একটি নির্ধারক সংঘর্ষ। এক প্রান্তে ছিল দুনিয়াবি শক্তির দম্ভ, অহংকার ও ঔদ্ধত্য; অপর প্রান্তে ছিলেন আল্লাহ, তাঁর প্রিয় রাসূল ﷺ এবং সে সকল সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম, যাঁরা পরিপূর্ণ ঈমানের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত ছিলেন। তাঁদের কাছে সামরিক রসদ ছিল না, কিন্তু তাঁদের ঝুলিতে এমন এক অসাধারণ সম্বল ছিল, যা ছিল অস্ত্রের চাইতেও অধিক ভীতিকর, আর তা হলো ঈমান, আকিদা এবং আসমানি সহায়তা— নুসরতে ইলাহি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন— فَلَمْ تَقْتُلُوهُمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ قَتَلَهُمْ وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ رَمَى (الأنفال: ١٧) অর্থ: “তোমরাই তাদের হত্যা করোনি, বরং আল্লাহই তাদের হত্যা করেছেন; এবং (হে নবী!) যখন আপনি নিক্ষেপ করেছিলেন, তখন প্রকৃতপক্ষে আপনি নিক্ষেপ করেননি, বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন।” যেমনি করে দুনিয়ার শক্তিগুলো মুসলিম বিশ্বের অস্ত্রভাণ্ডার, প্রযুক্তি কিংবা সামরিক সক্ষমতা দেখে উদ্বিগ্ন, তার চেয়েও বহুগুণ আতঙ্কিত তারা মুসলিমদের অটল ও অচঞ্চল ঈমানের দীপ্তি দেখে। আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ইসলামী ইমারাতের নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য মুজাহিদ নেতা ও দাঈদের বিরুদ্ধে কেমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, আর তাঁদের নির্মূল করতে কুফফার বিশ্ব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী পরিমাণ চেষ্টা-তদবির চালিয়েছে। কেন? মূলত এর কারণ ছিল, তাঁরা ছিলেন ঈমান ও সাচ্চা আকিদার ধারক ও বাহক। তাঁদের অন্তরে নিহিত ছিল এমন এক দৃঢ়তা, যা তাঁদেরকে এমন এক দুর্জয় শক্তিতে রূপান্তরিত করেছিল, যাদের প্রকৃত অস্ত্র ছিল ঈমান। আর সেই ঈমানই ছিল এমন জ্যোতি, যা আধুনিক প্রযুক্তির উত্তপ্ত অগ্নিকে নিস্তেজ ও নির্বাপিত করে দিতে সক্ষম। ১১. পারস্পরিক মমতা ও স্নেহশীলতা— বিজয়ের অন্তর্নিহিত কারণ আল্লাহ তাআলার ওপর অবিচল বিশ্বাসের পর যে বৈশিষ্ট্য কোনো সেনাবাহিনীকে বিজয়ের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে দেয়, তা হল অন্তরঙ্গ মমতা, হৃদয়গ্রাহী সহমর্মিতা এবং পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধা। গাযওয়ায়ে বদরে আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্তির অন্যতম প্রেক্ষাপট ছিল ঈমানদারদের পরস্পরের প্রতি এই গভীর সহমর্মিতা ও আন্তরিক ভালোবাসা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন— هُوَ الَّذِي أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ، وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَا أَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ (الأنفال: ٦٣) অর্থ: “তিনি সেই সত্তা, যিনি আপনাকে তাঁর সাহায্য এবং মুমিনদের মাধ্যমে শক্তিশালী করেছেন এবং তাঁদের অন্তরে পারস্পরিক ভালোবাসা সঞ্চার করেছেন। আপনি যদি জমিনের সবকিছু ব্যয় করতেন, তবু তাঁদের অন্তরে এ ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারতেন না; বরং আল্লাহই তাঁদের অন্তরে ঐক্য ও ভালোবাসার বন্ধন গেঁথে দিয়েছেন।” মুসলিমগণ বিজয়ী হয়েছিলেন, কারণ তাঁরা ছিলেন لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللّٰه— এই কালিমার শিরস্তবকে ঘিরে একতাবদ্ধ। তাঁদের একমাত্র লক্ষ ছিল ইসলামের পূর্ণ বাস্তবায়ন ও তার সুদূর প্রসার। এই লক্ষ্যই তাঁদেরকে এমন অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছিল, যেখানে প্রয়োজন হলে একজন সাহাবী নিজের পিতা, ভাই কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে তরবারি তুলতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। তাঁদের মাপকাঠি ছিল ইসলাম, যদি কেউ ইসলাম গ্রহণ করত, তবে সে যদি একজন হাবশি দাসও হতো, তবু তার মর্যাদা তাঁদের দৃষ্টিতে রক্তসম্পর্কিত আত্মীয়দের চেয়েও অধিকতর ছিল। তাঁদের কাতার ছিল মতপার্থক্যবর্জিত, কঠিন ও অদম্য! কুফরের মুখোমুখি এক অটল শিলাস্তম্ভ। পক্ষান্তরে, মুশরিকদের কাতার গঠিত ছিল গোত্রগত অহংবোধ ও স্বার্থান্বেষী হিসাব-নিকাশে, যেখানে প্রতিটি গোত্র কেবল নিজের স্বার্থই মুখ্য বিবেচনা করত। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যখনই মুসলিমরা একসূত্রে গাঁথা হয়েছে, পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাঁদের বিজয়ের ধারা রুদ্ধ করতে পারেনি। বরং তাঁরা বিস্ময়করভাবে দানবীয় সাম্রাজ্যসমূহের প্রাসাদ প্রকম্পিত করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের এ বিষয়ে উপদেশ দেন— وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ (الأنفال: ٤٣) অর্থ: “তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো, এবং পরস্পরে বিবাদ করো না; নচেৎ তোমরা ভেঙে পড়বে ও তোমাদের শক্তি হ্রাস পাবে।” ১২. ইয়াওমুল ফুরকান— বদর ছিল সত্য-মিথ্যার পার্থক্যরেখা গাযওয়ায়ে বদর ছিল একটি শাশ্বত সত্য ও সীমালঙ্ঘনকারী মিথ্যার মধ্যকার পার্থক্যরেখা। সেজন্যই আল্লাহ তাআলা এই দিনকে অভিহিত করেছেন “يوم الفرقان”— সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী দিবস হিসেবে। এই পৃথিবী, এই আকাশ— সমগ্র মহাবিশ্ব আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি। এবং এ সত্যও অনস্বীকার্য যে, পৃথিবীর সকল সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির নিরিখেই নির্ধারিত হওয়া উচিত। কিন্তু সে সময় পৃথিবী ছিল বাতিলের বিষবাষ্পে আচ্ছন্ন। সত্যের দীপ্তি ম্লান হয়ে গিয়েছিল, পৃথিবী পরিণত হয়েছিল ত্বাগূতী শক্তির খেলনারূপে, যেখানে আল্লাহর সৃষ্টির সঙ্গে নিষ্ঠুর পরিহাস করা হচ্ছিল। গাযওয়ায়ে বদর ছিল সেই অপবিত্র ও অবৈধ শক্তির অবসানের সূচনাবিন্দু। এটিই ছিল বাতিলের ক্ষয়িষ্ণু পরিণতির সূচক। এবং এর পর থেকে বাতিল আর কখনও আপন স্বরূপে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। সহজভাষায় বললে বদর এমন একটি বিপ্লব ছিল, যা শিরকের জাল ছিন্ন করে দিল এবং তাওহীদের আলো চারদিকে ছড়িয়ে দিল। এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে শিরক পরাজিত হলো এবং তাওহীদ বিজয়ী হলো। ১৩. ইসলাম কেবল একটি স্লোগানের নাম নয় গাযওয়ায়ে বদর এই অবিস্মরণীয় সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল যে— ইসলাম কেবল কণ্ঠনিঃসৃত স্লোগান বা বিমূর্ত ঘৃণার নাম নয়। সত্যের বিকাশ এবং মিথ্যার বিলুপ্তির জন্য আবশ্যক নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা, আত্মোৎসর্গ এবং বাস্তবমুখী সংগ্রাম। বদরের বীর যোদ্ধাগণ মিথ্যার দেবতাদের ধ্বংস করেছেন এবং সত্যের একমাত্র উপাস্য আল্লাহ তাআলাকে সর্বোচ্চে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ মহান কর্মযজ্ঞই বদরের মাহাত্ম্য। এ কারণেই তো আমরা একে বলি “يوم الفرقان”— বিচার ও পরিবর্তনের দিন।

https://almirsadbd.com/https-almirsadbd-com-i-shby-kdr-s-lr-n-2-last/ *ইসলামী শাসনব্যবস্থায় কাফিরদের সঙ্গে লেনদেনের নীতিমালা* [ দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব ] ✍🏻 বশীর বারান ইসলামের উদ্ভবলগ্ন থেকেই আরব ভূখণ্ডে এক গভীর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক রূপান্তর সূচিত হয়; উপজাতিকেন্দ্রিক এক বিকীর্ণ সমাজ পরিণত হয় এক সংহত, সুসংবদ্ধ এবং সভ্য জাতিতে। ইসলামী পরিচয়ের আলোকে পরিবারনীতি, দণ্ডবিধি, অর্থনৈতিক লেনদেন ও অন্যান্য বিধিবিধানের ভিত্তিতে এক ছিন্নমূল উপজাতিক কাঠামো রূপ নেয় একটি ঐক্যবদ্ধ উম্মতের অনুপম রূপে। ইসলামী শরীয়তের সার্বভৌম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গড়ে ওঠে এমন এক কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা, যা জনসাধারণকে সামষ্টিক কল্যাণ, মৌলিক মানবিক অধিকার এবং অন্যান্য মানবগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ও ইসলামের দাওয়াতের মৌলিক শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করে তোলে। ইসলামের মহীয়ান নবী মুহাম্মাদ ﷺ এই মহান অভিযাত্রার পথপ্রদর্শক ও রূপকার হিসেবে এমন এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হন, যিনি শুধু মুসলিম সমাজকেই নয়, বরং বহির্বিশ্বের অমুসলিম সমাজকেও আলোড়িত করেন। তাঁর সুদূরদর্শী রাষ্ট্রনীতি ও অনুপম ব্যবহারে জিহাদের ব্যতিরেকেও তিনি আপনজন ও পরজনের হৃদয় জয় করেন। তিনি ইসলামের বিধিবিধানকে কেন্দ্র করে একটি নীতিনির্ভর জীবনচর্চা ও মানবজাতির সঙ্গে ন্যায়ের ভিত্তিতে আন্তঃসম্পর্কের এক বৈশ্বিক আদর্শ নির্মাণ করেন। রাসূল ﷺ-এর এই রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এমনকি ইউরোপের ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীর চিন্তানায়কদেরও অভিভূত করে। জাঁ জাক রুসো, ভলতেয়ার, শোপেনহাওয়ার প্রমুখ বুদ্ধিজীবীরা এই প্রসঙ্গে অকপটে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। তাঁদেরই একজন মার্সেল তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন: “ইসলামের বৈশ্বিক দর্শন দুই মহান মৌলিকত্ব দ্বারা অভিষিক্ত— এক, আল্লাহর প্রতি ঈমান; এবং দুই, জাতি, বর্ণ ও গোত্রভিত্তিক উগ্রতা ও শ্রেষ্ঠত্বের সমস্ত অহমিকা পরিত্যাগ করে মানবসমাজে সাম্যের সর্বোচ্চ ঘোষণা।” এই মহান আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে রাসূল ﷺ মক্কার জাহেলি আরব ও ইয়াহুদি গোত্রসমূহের জাতি ও বর্ণকেন্দ্রিক গর্ববোধ নির্মূল করে দেন। ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম মানবজাতিকে যে সম্মান ও মর্যাদাবোধ দান করতে পারেনি, ইসলাম তা করেছে। এটি ছিল এমন একটি ধর্ম যা ইয়াহুদি-নাসারাদের প্রতিও করুণা ও সৌহার্দ্যের আচরণ করেছে। ইসলাম একটি এমন বিশ্ব নির্মাণে সংকল্পবদ্ধ, যেখানে মানবসমাজ পরস্পর সহমর্মিতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সমতার জীবন যাপন করবে। ইসলামের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস অত্যন্ত দীপ্তিময় ও স্পষ্টতাবাহী। এক সময় আরব গোত্রসমূহ এবং হাবশা, আমারাত, হীরা, গাসসান ও সাবার মতো পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সম্পর্ক ছিল দ্বন্দ্বপূর্ণ ও বিপর্যস্ত। কিন্তু নবী করীম ﷺ সেই সংকটময় প্রেক্ষাপটে আন্তর্জতিক সম্পর্ক ও বৈদেশিক কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে এমন এক ভিত্তি স্থাপন করেন, যা তাঁর নবুওতের যুগে তো বটেই, তাঁর ওয়াফাতের পরের যুগেও ইসলামী রাষ্ট্রসমূহের জন্য বৈশ্বিক লেনদেন ও সুসম্পর্কের এক অনন্য রূপরেখা হয়ে ওঠে। রাসূলুল্লাহ ﷺ মীসাক-এ-মাদীনা, সুলহে হুদায়বিয়া, এবং নাজরানের খ্রিস্টানদের সঙ্গে চিরস্থায়ী শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও বৈদেশিক সম্পর্কের প্রথম স্তম্ভ নির্মাণ করেন। তিনি আরব গোত্রসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ককে শৃঙ্খলাবদ্ধ করেন এবং ইসলামী শাসনব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ কাঠামোকে সংহত করেন। এরপর তিনি প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করেন, দূত প্রেরণ করেন এবং চুক্তিসমূহ সম্পাদন করেন। রোম ও পারস্যের মতো দুই পরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের দরবারে দূত পাঠানো সে যুগে নিছক এক আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ ছিল না; বরং তা বৈশ্বিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী সোপানরূপে বিবেচিত। এই দুই মহাসাম্রাজ্যের সংবেদনশীল রাজনৈতিক পরিসরে ছোট ছোট প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন এবং ইসলামী রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আত্মপ্রকাশের সক্ষমতা দান— এই সমগ্র উদ্যোগ নবী করীম ﷺ-এর সুপরিকল্পিত পররাষ্ট্রনীতির অন্তর্ভুক্ত। এরই পরিণতিতে রোম ও পারস্য উভয় সাম্রাজ্যই ইসলামের ন্যায়ের পতাকা ও তাঁর রাষ্ট্রনৈতিক প্রজ্ঞার সামনে অবনত হতে বাধ্য হয়।

https://almirsadbd.com/m-m-a-m-e-j-sh-j-o-o-k/ *শহীদ আমীরুল মুমিনীন মোল্লা আখতার মুহাম্মাদ মানসূর (রহিমাহুল্লাহ)–এর বর্ণাঢ্য জীবনপট ও খারিজি মতবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সুদৃঢ় অবস্থান : এক সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ* উমরী মাদরাসার সম্মানিত ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইসলামী ইমারাতের মনোনীত দ্বিতীয় প্রধান, শহীদ আমীরুল মুমিনীন মাওলানা আখতার মুহাম্মাদ মানসূর তাকাব্বালাহুল্লাহ। তিনি জীবিত আমীরুল মুমিনীনের জীবদ্দশাতেই বাস্তবিকভাবে ইমারাতের নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তাঁর ইন্তিকালের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর, ইমারাতের আহলে হাল ও ‘আক্বদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিবর্গ, আলেমসমাজ, জিহাদী নেতৃত্ব এবং অন্যান্য জাতীয় ব্যক্তিত্বসমূহ তাঁকে ইমারাতের নতুন আমীর হিসেবে মনোনীত করেন। তিনি শহীদ হওয়ার মুহূর্ত পর্যন্ত পূর্ণ সততা, গাম্ভীর্য এবং সাহসিকতার সাথে এই মহান কাফেলার নেতৃত্বের গুরু দায়িত্ব পালন করেন। নিম্নোক্ত পংক্তিতে তাঁর জীবন, অবদান এবং দাঈশি খারিজীদের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থানের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে— *জন্ম* শহীদ মাওলানা আখতার মুহাম্মদ মানসূর তাকাব্বালাহুল্লাহ, আলহাজ্ব মুহাম্মদ জান সাহেবের পুত্র, ১৩৪৭ হিজরি (১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে) আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের মেওয়ান্দ জেলার ‘বান্দে তৈমূর’ নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। যেহেতু তাঁদের পরিবার ঐ অঞ্চলের ধর্মপরায়ণ ও জ্ঞানপ্রেমী পরিবার হিসেবে পরিচিত ছিল এবং তাঁর পিতা ছিলেন এক জ্ঞানানুরাগী মানুষ, তাই মাওলানা মানসূর সাহেবের সর্বোত্তম মানের দীনী শিক্ষার জন্য তাঁর পিতা তাঁকে প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় শিক্ষাকেই জীবনপথ হিসেবে নির্ধারণ করে দেন। *শিক্ষা* মানসূর সাহেবকে সাত বছর বয়সে তাঁর পিতার নির্দেশে এলাকার প্রাথমিক মক্তব এবং গ্রামের মসজিদে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণে নিয়োজিত করা হয়। শৈশব থেকেই তাঁর মধ্যে প্রজ্ঞা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও দূরদর্শিতার লক্ষণ পরিস্ফুট ছিল বিধায় কেবল পিতাই নন, তাঁর শিক্ষকরাও বিশেষভাবে তাঁর প্রতি যত্নবান ছিলেন। যেহেতু তাঁদের পরিবার হিজরতের সময় বালুচিস্তানের ‘গির্দি জঙ্গল’ নামক ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল, তাই তিনি কিছু সময় সেখানেই এবং পরবর্তীতে ‘পাঞ্জপাই’ এলাকায় ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। এরপর তিনি কোয়েটায় চলে যান এবং কোয়েটা শহর ও ‘আবদুল্লাহ খান ক্রস’ এলাকার একটি মাদরাসায় দীনী কিতাবাদি অধ্যয়ন করেন। অতঃপর ইলমে দীনের সন্ধানে তিনি পেশোয়ারে যান এবং সেখানে ‘কচাঘড়া’ ও অন্যান্য এলাকায় ধর্মীয় পাঠ গ্রহণ করেন; পাশাপাশি পেশোয়ারের ‘জলোজাই’ ক্যাম্পে এক ‘মাওকূফ আলাইহি’ অধ্যায় সম্পন্ন করেন। এই সময়েই আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা কমিউনিস্টদের হাতে চলে যায় এবং আফগান জনতা তাঁদের বিরুদ্ধে ইসলামী বিপ্লবের সূত্রপাত করেন। *জিহাদ ও রাজনৈতিক সংগ্রাম* ১৯৭৮ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর, দেশপ্রেমিক আফগান জনতা ইসলামী প্রতিরোধ শুরু করে। মাওলানা মানসূর, যিনি তখন ছিলেন ১৮ বছরের এক দক্ষ ও সাহসী তরুণ, আত্মসচেতনভাবে দীন ও মাতৃভূমির রক্ষার নিমিত্তে সোভিয়েত হামলাকারী ও স্থানীয় কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদের পথ বেছে নেন। তিনি বছরজুড়ে দীনী পাঠে নিয়োজিত থাকতেন এবং যখন তা শেষ হত, তখন জিহাদী ফ্রন্টে অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৮৫ সালে তিনি কান্দাহার প্রদেশের খ্যাতনামা জিহাদী কমান্ডার শহীদ ক্বারী আযীযুল্লাহর নেতৃত্বাধীন এক ফ্রন্টকে বেছে নেন এবং ‘পাঞ্জওয়াই’ জেলার ‘পাশমূল’ এলাকায় আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মাদ হাসান আখুন্দের তত্ত্বাবধানে জিহাদ চালিয়ে যান। তিনি বহু সামরিক অভিযানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে একবার রুশদের একটি কৌশলগত ঘাঁটির উপর হামলার সময় তিনি এমনভাবে আহত হন যে তাঁর শরীরে ১৩টি স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁকে সুস্থতা দান করেন। দ্বিতীয়বার ১৯৯৭ সালের মে মাসে, ইসলামী ইমারাতের শাসনামলে মাযার-ই-শরীফ বিমানবন্দরে তিনি আহত হন এবং সেখানেই শত্রুদের হাতে বন্দী হন। *তালিবান ইসলামী আন্দোলনে যোগদান* ১৯৯২ সালে আফগানিস্তানে কমিউনিস্ট শাসনের অবসান ও গৃহযুদ্ধ শুরু হলে, মাওলানা মানসূর অন্যান্য খাঁটি মুজাহিদীনদের মতো অস্ত্র পরিত্যাগ করেন। তিনি গৃহযুদ্ধে কোনো পক্ষ অবলম্বন করেননি। তিনি সাধারণ জীবনকে অগ্রাধিকার দেন ও সংগঠনিক কর্মসূচি থেকে নিজেকে দূরে রাখেন, যদিও কিছু জ্ঞান ও প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন। ১৪১৫ হিজরি (১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ) সালে আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ উমার মুজাহিদ রহ. তালিবান ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ঐ সময় মাওলানা মানসূর পেশোয়ারের ‘জলোজাই’ ক্যাম্পের ‘আমিনিয়া’ মাদরাসায় শায়খুল হাদীস মাওলানা শাহাবুদ্দীন দিলাওয়ার এবং মরহুম মাওলানা সাইয়্যিদ কুরাইশ বাবার কাছে দীনী শিক্ষা নিচ্ছিলেন এবং অন্যান্য তালিবানের সাথেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। যখন রেডিওতে তালিবান আন্দোলনের ঘোষণার সংবাদ পৌঁছে, তখন তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে এই আন্দোলনের বাস্তবতা যাচাই করতে কয়েকজনকে কান্দাহার পাঠানো দরকার। তিনি দুইজন সাথীকে প্রেরণ করেন, যারা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করে ফিরে এসে নিশ্চিত করেন যে এটি একটি খাঁটি তালিবান ও মুজাহিদীনদের আন্দোলন। এরপর মাওলানা মানসূর ও তাঁর সাথীরা রওনা হন। যে রাতে তাঁরা ‘বোলদাক’ পৌঁছান, তালিবান ‘তাখতা পুল’ অঞ্চল দখল করে কান্দাহার অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছিল। বোলদাকে এক বৈঠকে মানসূর সাহেব ও তাঁর সাথীরা নিজেদের মধ্যে এক নেতাকে নির্ধারণের জন্য পরামর্শ করেন এবং তাঁকে আমীর মনোনীত করেন। অতঃপর সকলেই তাঁর নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলনে যোগদান করেন। *ইসলামী ইমারাতের নির্বাচিত আমীর হিসেবে মনোনয়ন* ১৪ শাওয়ালুল মুখাররম ১৪৩৬ হিজরি (৩০ জুলাই ২০১৫) ইসলামী ইমারাতের নেতৃত্ব পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে আমীরুল মুমিনীন মোলা মুহাম্মাদ উমার মুজাহিদ রহ.-এর শাহাদাতের ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে শূরা সদস্যগণ, শায়খগণ ও সম্মানিত আলেমসমাজের পরামর্শে, মানসূর সাহেবকে ইমারাতের নতুন আমীর হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। পরে সকলে একবাক্যে তাঁর প্রতি বাইআত প্রদান করেন। *আমেরিকান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ* ৭ অক্টোবর ২০০১, আমেরিকার নেতৃত্বে আফগানিস্তান আক্রান্ত হলে, মানসূর সাহেব সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু করেন। তাঁর প্রতিরোধের উজ্জ্বল দিকগুলোর একটি ছিল কান্দাহার বিমানবন্দরের চারপাশে মার্কিন বোমাবর্ষণের বিরুদ্ধে দৃঢ়তা এবং সরাসরি মার্কিন দালালদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ। ২০০৩ ও ২০০৮ সালে কান্দাহার কেন্দ্রীয় কারাগার দুইবার তালিবানদের দ্বারা অবাক করা কৌশলে ভেঙে ফেলা হয় এবং দেড় হাজারের অধিক বন্দি মুক্ত করা হয়— এইসব অপারেশন মানসূর সাহেবের নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়। *দাঈশের সঙ্গে সংলাপের সূচনা* ২০১৫ সালে যখন দাঈশ ‘খোরাসান প্রদেশ’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়, মানসূর সাহেব দাঈশের নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির উদ্দেশে এক চিঠি প্রেরণ করেন। তিনি দাঈশকে অনুরোধ করেন যেন তারা তালিবান নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেয় ও জিহাদী কাতারকে বিভক্ত না করে। তিনি সতর্ক করেন যে বিভক্তি কুফফারদের জন্য খুশির কারণ হবে এবং জিহাদের সাফল্য বিনষ্ট হবে। *বিভেদের গভীরতা* যদিও তিনি বারবার দাঈশকে পরামর্শ দেন যেন মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ফিতনার পথ পরিহার করে, কিন্তু দাঈশ তা গ্রহণ করেনি এবং আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে তাদের প্রভাব বিস্তার করে। একপর্যায়ে দাঈশ তালিবানের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে এবং অবশেষে ইমারাতও তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা দেয়। *ইসলামী ইমারাতের সামরিক প্রতিক্রিয়া* দাঈশের বিস্তার ঠেকাতে মানসূর সাহেব বিশেষ ইউনিট গঠন করেন। নাঙ্গারহার প্রদেশে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে দাঈশের ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করেন। ইমারাত ঘোষণা করে যে, দাঈশ জিহাদী কাতারে বিভাজন সৃষ্টি করছে। *দাঈশ সদস্যদের আত্মসমর্পণ* ইমারাতের চাপে, দাঈশের কিছু নেতা ও যোদ্ধা তাদের দল ত্যাগ করে পুনরায় ইমারাতে যোগদান করেন এবং মানসূর সাহেবের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেন। তাদের ভাষ্যে ইসলামী ইমারাতের নেতৃত্বের সঙ্গে সঙ্গতি স্থাপন এবং দাঈশের প্রকৃত জঘন্য চেহারা সনাক্ত করার কারণে তারা দাঈশের সঙ্গে তাদের বাই‘আত বাতিল করে মোল্লা আখতার মুহাম্মাদ মানসূর তাকাব্বালাহুল্লাহর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। *নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্যাবলি* • ঐক্যের প্রতি অঙ্গীকার: মানসূর সাহেব তাকাব্বালাহুল্লাহ ইসলামী ইমারাতের বিভিন্ন কমান্ডারদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালান এবং একটি সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ, সুশৃঙ্খল ও সংহত সারি গঠন করেন। • শান্তি ও জিহাদের মধ্যে ভারসাম্য: তিনি শান্তিপূর্ণ আলোচনার দরজা খোলা রাখেন, কিন্তু একইসাথে আগ্রাসনকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যেতে থাকেন। • খারিজীদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান: মানসূর সাহেব তাকাব্বালাহুল্লাহ খারিজীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন, যা ইসলামী ইমারাতের মূলনীতি ও উম্মাহর ঐক্যের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। *শাহাদাত কবুল* শেষপর্যন্ত এই একনিষ্ঠ ও আত্মোৎসর্গকারী মুজাহিদ, যিনি ইসলামী ইমারাতের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর এক বছরও পূর্ণ করতে পারেননি, ২০১৬ সালের ২১ মে এক মার্কিন ড্রোন হামলায় শাহাদাতের মর্যাদায় ভূষিত হন। তাকাব্বালাহুল্লাহু শাহাদাতাহু।

https://almirsadbd.com/amra-gazar-pashe-achhi/ *#نحن مع غزة* *আমরা গাযযার পাশে আছি* যখন বিশ্বের ক্ষমতাকেন্দ্রগুলিতে যালিমদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়, যখন মাযলুমদের আর্তচিৎকার বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টির আড়ালে ঠেলে দেওয়া হয়, যখন চারপাশে নীরবতা ও নিষ্ঠুর উদাসীনতা পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকে— তখনো গাযযার ভূমিতে এক জাতি বুক চিতিয়ে ঘোষণা করে, ”حسبنا الله ونعم الوکیل!“ (আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনিই শ্রেষ্ঠ কর্মনির্বাহকারী।) গাযযা— এক রক্তস্নাত জনপদ; যেখানে এই মুহূর্তে হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশু মা-বাবার কোল থেকে ছিটকে পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, যেখানে প্রতিদিন ধসে পড়া ভবনের নিচে নিষ্পাপ প্রাণসমূহ স্তব্ধ হয়ে যায় চিরতরে, সেখানে মায়েরা তাঁদের কলিজার টুকরো সন্তানকে মৃত্তিকায় সমর্পণ করে, ধৈর্য ও অবিচলতার চাদর মুড়িয়ে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকেন। গাযযার গলিপথে নেই জল, নেই বিদ্যুৎ, নেই ওষুধ। রোগাক্রান্ত শিশুরা কষ্টে ছটফট করছে। বিশ্বজাতির বিবেক নিস্তেজ হয়ে গেছে। আত্মমর্যাদা দাবি করা তথাকথিত সভ্য বিশ্বমানচিত্রের রাজধানীগুলোতে মানবাধিকারের উচ্চকণ্ঠ শ্লোগান তো উচ্চারিত হয়, কিন্তু ফিলিস্তিন ও গাযযার শিশু, বৃদ্ধ আর নারীদের পক্ষে একটি কণ্ঠও জেগে ওঠে না। না কোনো কূটনৈতিক প্রয়াস, না কোনো মানবিক সহায়তা; আছে কেবল ধ্বংসযজ্ঞ, রক্তপাত আর বিপর্যয়। আমরা গাযযার সঙ্গে আছি! কারণ, সেখানকার মানুষ শত নিপীড়নের মধ্যেও আজো যালিমের সামনে মাথা নত করেনি। গাযযার মসজিদসমূহ থেকে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি সাক্ষ্য দেয়— ঈমানদাররা নিপীড়নের ঝড়েও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে। সেখানকার শিশুরা পাথর হাতে ট্যাংকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, সেখানকার মায়েরা তাঁদের সন্তানকে শাহাদাতের শুভবার্তা দেন, সেখানকার তরুণেরা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে উচ্চারণ করে— “লাব্বাইকা ইয়া আকসা!” نحن مع غزة! আমরা গাযযার পাশে আছি, কারণ গাযযার বর্তমান বাস্তবতা আমাদের শিখায়— যুলুম চিরস্থায়ী হয় না। যত অস্ত্র, যত শক্তি ও ঔদ্ধত্যই থাকুক না কেন, একদিন সত্যই বিজয়ী হয়। আমরা গাযযার পাশে আছি, কারণ আমরা দেখছি, কীভাবে একটি পুরো শহরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, কীভাবে পানি ও খাদ্য বন্ধ করে লাখো মানুষের ওপর একসঙ্গে শাস্তি চাপানো হয়েছে, কীভাবে প্রতিদিন নৃশংস বোমাবর্ষণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বসতিগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা গাযযার পাশে আছি... কারণ উম্মাহ একটি দেহ, আর তার একটি অঙ্গ আজ কাঁদছে। নীরবতা এক অপরাধ, আর নিপীড়িতের পক্ষে দাঁড়ানোই ঈমানের নিদর্শন। আমরা গাযযার পাশে আছি... কারণ নির্যাতিতের পাশে দাঁড়ানো আমাদের ধর্মীয় ও নৈতিক কর্তব্য। কারণ বাইতুল মুকাদ্দাসের পবিত্রতা আমাদের আহ্বান জানাচ্ছে। কারণ অন্ধকারতম নিপীড়নের মধ্যেও গাযযার মানুষের ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল আমাদের অন্তর কাঁপিয়ে দিচ্ছে। আমাদের প্রতিপালক বলেন: ”وَلَا تَحْسَبَنَّ اللّٰهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ“ (আর তুমি কখনো ভেবো না যে, আল্লাহ যালিমদের কাজকর্ম সম্পর্কে অজ্ঞাত আছেন।) আমরা গাযযার সঙ্গে আছি! আমাদের দুয়ায়, আমাদের লেখনীতে, আমাদের সামর্থ্যে, আর আমাদের কণ্ঠে। আমরা নীরব থাকব না— কারণ গাজার প্রতিটি নিষ্পাপ শহীদ আমাদের জাগিয়ে দিচ্ছেন। এ যুদ্ধ মানবতার অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ, আর এই যুদ্ধে আমরা নিপীড়িতদের পাশে। نحن مع غزة، نحن مع الحق، نحن مع المظلومین! আমরা গাযযার পাশে, আমরা সত্যের পক্ষে, আমরা নিপীড়িতদের সঙ্গে!

https://almirsadbd.com/%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%96%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%86%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%ae%e0%a6%98%e0%a6%be%e0%a6%a4/ *কাবুলে খারিজিদের আত্মঘাতী জ্যাকেট তৈরির কেন্দ্র গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে* আল মিরসাদ নিউজ ডেস্ক গতকাল সন্ধ্যার সময় কাবুলের ১৫ নম্বর নিরাপত্তা জোনে দাঈশ সদস্যদের এক গোপন ঘাঁটির ওপর চালানো অভিযানে দুই দাঈশ সদস্য নিহত হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। আল মিরসাদকে দেওয়া সূত্রের ভাষ্যমতে, এই অভিযান ১৩ই জিলহজ (৯ই জুন) তারিখে ১৫ নং নিরাপত্তা জোনের কসবা এলাকায় ঐ গোপন ঘাঁটির ওপর চালানো হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দাঈশ খারিজিরা সেখানে মাইন ও আত্মঘাতী জ্যাকেট প্রস্তুত করত। সূত্রমতে, অভিযানের ফলে দুই দাঈশ সদস্য নিহত হয়েছে এবং অস্ত্রশস্ত্র ও একটি করোলা গাড়ির পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য, আত্মঘাতী জ্যাকেট, পটকা, রিমোট ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, দাঈশ সদস্যরা এই কেন্দ্রে প্রস্তুতকৃত মাইন ও জ্যাকেট অন্যান্য স্থানে স্থানান্তর করত এবং পরে এগুলো ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে ব্যবহার করত।

ব্রেকিং নিউজ: আল মিরসাদকে নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে যে, নিরাপত্তা বাহিনী কাবুল বিমানবন্দরের নিকটবর্তী কসবা এলাকায় দাঈশ খারিজিদের একটি আস্তানায় বর্তমানে অভিযান চালাচ্ছে। অতিরিক্ত তথ্য পরে জানানো হবে।

https://almirsadbd.com/be-a-y-at-n-1-d-s-gr/ *বেলুচিস্তানে ‘আবু ইয়াসির আত-তুর্কী’ নামক এক দাঈশ সদস্য গ্রেফতার* আল মিরসাদ নিউজ ডেস্ক তুর্কি গণমাধ্যম একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে— একজন তুর্কি নাগরিককে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমানার কাছাকাছি এক অঞ্চলে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করে তুর্কি নিরাপত্তা সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তির নাম ওজগুর আলতোন (Özgür Alton) বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, সে ‘দাঈশ খোরাসান’-এর শীর্ষ দায়িত্বশীলদের একজন ছিল। সূত্র মারফত আল মিরসাদকে জানানো হয়েছে, আলতোন ২০১৮ সালে আফগানিস্তানে আগমন করে এবং দাঈশে যোগ দেয়। এক বছর পর সে গ্রেফতার হয় এবং কাবুল বিজয় পর্যন্ত কারারুদ্ধ ছিল। তবে বিজয়ের সময় যখন কারাগারগুলো ভেঙে দেওয়া হয়, তখন সেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। সূত্রগুলো জানায়, ২০২১ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সে পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। ২০২৩ সালে যখন আফগানিস্তানে ইসলামী ইমারাতের অভিযানে দাঈশের বহু নেতা ও সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন সে পালিয়ে বেলুচিস্তানে আশ্রয় নেয়। দাঈশ সদস্যদের মাঝে ওজগুর আলতোন আবু ইয়াসির আত-তুর্কী নামে পরিচিত ছিল। একজন নিরাপত্তা সূত্র আলমিরসাদকে জানিয়েছেন, বেলুচিস্তানে আলতোন মূলত আজারবাইজানি ও তুর্কি নাগরিকদের দাঈশে নিয়োগ এবং আর্থিক সহায়তা সংগ্রহে নিয়োজিত ছিল। তার প্রচেষ্টার মাধ্যমে দাঈশে যোগ দিয়ে কিছু আজারবাইজানি নাগরিক নিজ দেশে গ্রেফতার হয়, আবার অনেককে বেলুচিস্তানে গ্রেফতারের পর আজারবাইজানের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিছু বিদেশি নাগরিক, যাদের আলতোন বেলুচিস্তানে ডেকেছিল, তারা মস্তুংয়ে দাঈশ কেন্দ্রসমূহে পরিচালিত অভিযানে নিহত হয়— যেখানে প্রায় ৩০ জন দাঈশ যোদ্ধা নিহত হয়েছিল। এ কথা উল্লেখযোগ্য যে, বেলুচিস্তানে আবু ইয়াসিরসহ পূর্বে গ্রেফতার হওয়া শরীফুল্লাহ ও অন্যান্য দাঈশ সদস্য এবং মস্তুংয়ে তাদের খোলা ঘাঁটিগুলোর ওপর হামলা— এসব থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দাঈশ খোরাসানের কেন্দ্র এখন বেলুচিস্তানে স্থানান্তরিত হয়েছে, যেখান থেকে তাদের কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হচ্ছে।

https://almirsadbd.com/r-sawr-zj-mj-j-sh-15/ *রাসূলুল্লাহ ﷺ–এর যুদ্ধজীবন: মানবজাতির জন্য শিক্ষা* [ পঞ্চদশ পর্ব ] ✍🏻 আবু রাইয়ান হামিদী গাযওয়ায়ে বদর থেকে আহরণীয় শিক্ষা গাযওয়ায়ে বদর ইসলামের সামরিক ইতিহাসে এক দীপ্তিমান ও স্বর্ণাক্ষরে লিখিত অধ্যায়। এই গাযওয়াহ ছিল মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উত্থানের এক মোক্ষম সূচনাবিন্দু, যা কেবল তাদের আঞ্চলিক মর্যাদাকে সুদৃঢ় করেনি, বরং তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কুরায়েশদের তর্ক ও অবস্থানের ভিতটিকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল এবং তাদের নিঃসহায় ও একাকী করে তুলেছিল। এই গাযওয়াহ অসংখ্য উপদেশ ও ইবরতের অফুরন্ত ভান্ডার, যেগুলোর সুনির্বাচিত উপলব্ধি প্রতিটি মুসলিমের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। বলা যায়, যুদ্ধনীতি ও সশস্ত্র প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উৎস— যেখান থেকে প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির জ্ঞান আহরণ আবশ্যক। এই শিক্ষাসমূহকে অধিকতর সুবিন্যস্তরূপে উপস্থাপন করার নিমিত্তে, লেখাটি দুইটি অধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়: গাযওয়ার সূচনা থেকে সম্মুখ সমর অবধি এই অধ্যায়ে মুসলিম বাহিনীর গমনকাল থেকে যুদ্ধের সূচনালগ্ন পর্যন্ত ঘটনাবলি সংক্ষিপ্তভাবে বিবৃত হবে, যেখানে উম্মতের জন্য বহু মূল্যবান শিক্ষা নিহিত রয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়: যুদ্ধ থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত এই অধ্যায়ে যুদ্ধে প্রবেশের পর থেকে পরিণতি অবধি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র কৌশল ও প্রজ্ঞাপূর্ণ পদক্ষেপ থেকে আহরণীয় শিক্ষাগুলো পর্যালোচিত হবে। প্রথম অধ্যায়: গাযওয়ার সূচনা থেকে সম্মুখ সমর অবধি ১. মুসলিমদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কুরায়েশের একটি বিশাল বাণিজ্য কাফেলাকে থামানো; কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার অপরিহার্য সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাফেলাটি রক্ষা পায়, এবং মু’মিনদের মুখোমুখি হতে হয় এক সুসজ্জিত বাহিনীর। এই দ্ব্যর্থক পরিস্থিতি তাদের জন্য বিজয় ও গনিমতের দ্বৈত অর্জনের দিক উন্মোচন করে। এ ঘটনার নির্যাস থেকে দুটি মৌলিক শিক্ষা উদ্ভাসিত হয়: ক. কাফির বাহিনীর ধনসম্পদ মুসলিমদের জন্য হারাম নয়; বরং মুসলিমদের অধিকার বলে বিবেচিত হয় এবং তাদের মালিকানায় পরিণত হয়। গাযওয়ায়ে বদরের তাৎপর্যপূর্ণ কারণ ছিল কুরায়েশের ঐ কাফেলা, যা মক্কামুখী যাত্রায় ছিল। সেই সময় কুরায়েশ ছিল ঘোরতর যুদ্ধাবস্থায়, এবং তারা মুহাজিরদের ধন-সম্পদ, বাগান ও ভূসম্পত্তি দখল করে নিয়েছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে মুহাজিরদের জন্য এই কাফেলাকে কবজা করা ছিল তাদের ন্যায্য অধিকার। এই সিদ্ধান্ত কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতসমূহের প্রকৃত প্রতিফলন: "وَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَا" “আর পাপের প্রতিফল সে রকমই একটি পাপ।” (সূরা আশ-শূরা: ৪০) "فَمَنِ اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُوا عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ" “আর কেউ যদি তোমাদের উপর যুলুম করে, তবে তোমরাও তার উপর তদ্রূপ যুলুম করো।” (সূরা আল-বাকারা: ১৯৪) অতএব, কেউ যদি অজ্ঞতা কিংবা গোঁড়ামির বশবর্তী হয়ে মুসলিমদের এই পদক্ষেপকে দোষারোপ করে, তবে সে নিঃসন্দেহে সত্য থেকে দূরে অবস্থান করছে। খ. বিজয়ের নির্ণায়ক কেবল সংখ্যা নয়; বরং তা নির্ধারিত হয় মান ও মহত্ত্বের ভিত্তিতে। মক্কার বাহিনী ছিল বিপুল শক্তিসম্পন্ন— তাদের ছিল অগণন ঘোড়া, অস্ত্র, সৈন্য, এবং দৈনন্দিন উট জবেহর ব্যুৎপত্তি। অপরদিকে, মদিনার বাহিনী ছিল সংখ্যায় নগণ্য, খাদ্যদ্রব্যে অনাহুত, অথচ তাদের হৃদয়ে ছিল শাহাদতের অপরিমেয় আকাঙ্ক্ষা ও ঈমানি এক প্রশান্তি। সেই আত্মিক শক্তিই ছিল তাদের প্রকৃত বিজয়ের উৎস, শহীদ হওয়া হোক বা বিজয়লাভ— উভয়ই ছিল তাদের জন্য সফলতার সমার্থক। ২. এ গাযওয়াহ মুসলিম উম্মাহকে এই অনবদ্য শিক্ষা দেয় যে, যেকোনো যুদ্ধ পরিচালনায় সেনাপতির উচিত নিজের গোয়েন্দা কার্যক্রমকে সুসংগঠিত ও সজাগ রাখা, যাতে শত্রুর গতিবিধি ও কৌশলসমূহ সম্পর্কে সচেতনতা অর্জিত হয়, এবং প্রস্তুতি গ্রহণে কোনো অপূর্ণতা না ঘটে। ৩. এই গাযওয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কৌশলী পদক্ষেপ পরামর্শের অপরিসীম গুরুত্বের প্রতিচ্ছবি। তিনি কেবল নবীই ছিলেন না; তাঁর ইজতিহাদ ছিল ত্রুটিমুক্ত, আর ভুল হলে আল্লাহ্ তায়ালা নিজে তা সংশোধন করতেন। তবুও তিনি তাঁর সাহাবাগণের মতামত গ্রহণ করতেন, পরামর্শ করতেন, এমনকি সামরিক কৌশল নির্ধারণেও। তাঁর এই অনুপম দৃষ্টান্ত শুধু বদরযুদ্ধেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তাঁর সারাবেলা ছিল শূরা ও পরামর্শে পরিপূর্ণ। অতএব বলা যায়, যেসব বিষয়ে শরিয়তের সরাসরি নির্দেশ (নস্) নেই, বরং তা কৌশলগত, প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অন্তর্ভুক্ত, সেসব ক্ষেত্রে সহচর ও শুভানুধ্যায়ী ব্যক্তিবর্গের মতামত অবলম্বন করা উচিত। কিন্তু যেখানে কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট নস বিদ্যমান, সেখানে মতামতের কোনো স্থান নেই; বরং বাধ্যতামূলকভাবে ঐ নির্দেশ অনুযায়ী আমল করা আবশ্যক। ৪. শত্রুকে প্রতিটি অঙ্গনে পরাভূত করতে হবে, হোক তা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রচারমূলক কিংবা সামরিক অঙ্গনে— যাতে তারা তাদের পথভ্রষ্ট অবস্থান থেকে ফিরে আসে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরায়েশের বাণিজ্য কাফেলাকে টার্গেট করেন, যা একদিকে ছিল তাদের ইসলাম-বিদ্বেষী কার্যকলাপের প্রতিক্রিয়া, অপরদিকে এক সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক যুদ্ধ। কেননা এই কাফেলায় কুরায়েশদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ গমন করছিল, যার বিনাশ তাদের জন্য এক চরম আর্থিক আঘাত হতো— এটিই ছিল কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদের অন্যতম লক্ষ্য। সুতরাং, কাফিরদের ইসলাম অস্বীকারের পর, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিটি ময়দানে প্রতিরোধ ও প্রভাব বিস্তার করা অপরিহার্য, যাতে যুদ্ধে সুনিপুণ কৌশলের মাধ্যমে সফলতা অর্জিত হয় এবং শত্রু সর্বস্তরে পর্যুদস্ত হয়।