ED-Engineer's Diary
                                
                            
                            
                    
                                
                                
                                February 8, 2025 at 07:15 PM
                               
                            
                        
                            আজ ৮ ফেব্রুয়ারি...
লোমহর্ষক ভয়ানক রাতের দুই বছর
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ;একের পর এক ডেকে নিয়ে রাত ১২:৩০ থেকে সকাল ৫:৩০ চারজনকে অকথ্য নির্যাতন করে ছাত্রলীগের মোট ২৩ জন। পর্যায়ক্রমে কাঠ,স্ট্যাম্প,প্লাস্টিক পাইপ টানা সব ধরণের নির্যাতন চলতে থাকে।মনে হচ্ছিল কখন ভোর হবে,মুখে গামছা বেঁধে পানি ঢালা ফুটবল বানিয়ে দলন মন্থন কিছুই বাদ রাখেনি।শরীরের একটি অংগোও নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি। 
সকাল এক এক করে সবাইকে রুমে পাঠান হয়।রুমে নজরদারি রাখা হয়। এরপর কিছুক্ষণের জন্য বাসায় একটা ফোন দেবার সুযোগ পাই-আব্বুকে আসতে বলি।এরপর আব্বু আসলে তাকেও বেঁধে পিটানোর কথা বলে।এরপর সন্ধ্যার দিকে চকবাজার থানার পুলিশ- NSI যৌথভাবে হোস্টেলে আসে।তখন আমাদেরকে শিখিয়ে দেওয়া হয়,আমরা চকবাজারে ছিনতাইকারী দ্বারা নির্যাতিত হয়েছি/বাথরুমে পড়ে গেছি৷উনারা আমাদের আঘাত দেখেন এবং ডা. মিজান এবং ডা. রেজোয়ান রেহানকে হোস্টেলে ডাকেন।আমাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমে নিচের লবিতে নিয়ে যাওয়া হয়।তখন লবিতে আমাদেরসহ চারপাশ ঘিরে ফেলে নির্যাতনকারীরা।এর মধ্যে ডা.মিজান স্যার আমাদেরকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। 
OSEC এর EMO আমাদেরকে দেখে কান্না করে ফেলেন এবং দ্রুত ক্যাজুয়ালিটিতে পাঠিয়ে দেন। এরপর আসেন ডা.সাহেনা ম্যাম।উনি এসে আমাদেরকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসা করেন,কারা ঘটিয়েছে,নাম জেনে নেন।কিছুক্ষণ পর উনি কোনায় যেয়ে ফোন করে বলতে থাকেন,"রেহান তুমি ছাত্রলীগকে বলো হল থেকে চলে যেতে।" মেডিকেল বোর্ড গঠিত হয় এবং তাদের সিদ্ধান্তে আমাদেরকে ICU তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।ICU তে আমাদের চিকিৎসা চলাকালীন ১১ তারিখ দুপুরের দিক কয়েকজন ICU তে ঢুকে ফরেনসিক মর্গে পাঠানোর হুমকি দেয়।কথা ছিল একটাই-মুখ বন্ধ রাখতে হবে।দুইজন দালাল ইন্টার্ণ চিকিৎসকও প্রচ্ছন্নভাবে মুখ বন্ধ রাখতে বলে(যাদের পরিচয় এখনও জানিনা)।
একদিকে ছাত্রলীগকে হল থেকে চলে যেতে বলেন আর অপরদিকে আমার সকল ব্যাচমেটের ক্লাস বর্জন-স্বারকলিপি দেওয়া সত্ত্বেও ডা.সাহেনা গণমাধ্যমে মিথ্যাচার করতে থাকেন।তিনি বলতে থাকেন-কে বা কারা ঘটনা ঘটিয়েছে,চারজন কেউ নাকি মুখ খুলছে না।এরপর জুলাই-২৪ বিপ্লবের এক নেপথ্য নায়ক এবং সংবাদমাধ্যমের চাপে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিটি গঠন করেন এবং সকল শিক্ষক নিয়ে বসেন।সেখানে কয়েকজন "দালাল শিক্ষক " ভুয়া প্রমাণপত্র-ছাত্রলীগের কথায় ছাত্রলীগ নয়,আমাদের ৪জনকেই স্থায়ী বহি:ষ্কার করতে বলে। 
তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করে। আমাদের সাক্ষাতকার নেয়,একমাস পর আসল কুশীলবদের ছেড়ে দিয়ে নামকাওয়াস্তে শাস্তি ঘোষণা করে।অসুস্থ শরীরে ডেকে আনে আমাদেরকে।ছিলেন অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ সহ ডা.মনোয়ারুল হক শামীম,ডা.রবিউল করিম চৌধুরী,ডা.শাহাব উদ্দিন,ডা.মিজানুর রহমানসহ অনেকে। এর মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষক সাক্ষাত জানোয়ারের ভূমিকা নেয়।আমাদেরকে ক্লাসে আসলে আবার মারতে পারে-তারা কোন নিরাপত্তা দিতে পারবে না, ক্লাসে আসলে পাশ/ফেল তহ তাদের হাতেই বলে আমাদেরকে চমেক থেকে মাইগ্রেশন করে ছোট মেডিকেলগুলোতে চলে যেতে বলে,হলে আজীবনের জন্য সিট বাতিল করে দেয়।মিটিং শেষ হবার পরপরই ডা.রবিউল অভিযোগ তুলে নিয়ে মীমাংসা করে ফেলতে বলেন ।অর্থাৎ এখানে চমেকের একাডেমিক কাউন্সিল এবং তদন্ত কমিটি নামকাওয়াস্তে শাস্তি দেয় এবং আমাদেরকে নয়টি মাস ক্যাম্পাসের বাইরে রাখে।আসল উদ্দেশ্য ছিল আমাদেরকে ক্যাম্পাসে আসতে না দিয়ে ছাত্রলীগকে খুশি করা।আমরা ক্যাম্পাসে আসার ব্যাপারে কথা বলতে আমার আব্বু এই নয় মাসে ২২-২৩বার প্রিন্সিপাল অফিসে ডা.সাহেনার সাথে সাক্ষাত করতে আসে।সকাল ৮ থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বসিয়ে রাখার পর কখনও দেখা দিতেন,কখনও দেখা দিতেন না।একই ধরণের কথা বলতেন। 
অবশেষে ৯ মাস ২ দিন পর সামনে সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট আর এদিকে ফিরলেও থার্ড প্রফে অংশ নিতে পারব না-এটি বুঝে ক্যাম্পাসে ফিরতে অনুমতি দেয়।শুরু হয় আমাদের ডিপার্টমেন্ট-ডিপার্টমেন্ট এর বারান্দার-বারান্দায় ঘোরা।কি অকথ্য শারিরীক-মানসিক নির্যাতন আমাদের ও আমাদের পরিবারের ওপরে প্রথমে ছাত্রলীগ আর এরপর শিক্ষক নামধারী 'স্বাচিপ-লীগ' চালিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।নির্যাতনের পর এরপর একাডেমিক ক্যু এর মাধ্যমে নয় নয়টি মাস ক্যাম্পাস থেকে দূরে রাখে। 
একদিকে শারীরিক নির্যাতন অপরদিকে শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতির কারণে এই ধরণের অবস্থান-জীবনকে দূর্বিষহ করে তুলেছিল।শিক্ষকরা কিভাবে এমন করতে পারেন-সেটাই ছিল অবাক করার মত।নতুন এই বাংলাদেশে শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে এই ভূমিকায় যেন তারা অবতীর্ণ না হন।এই মেডিকেল ক্যাম্পাসে রয়েছে তিন তিনটি লাশের ইতিহাস,অসংখ্য নির্যাতনের ইতিহাস।এই গজব যেন আর কখনও চমেকে না নেমে আসে। সরকার এসেছে-গিয়েছে,নেতা এসেছে-গিয়েছে,কিন্ত কেউ ই ডা.মিজান,আবিদ ভাইয়ের মায়ের কোল ভরাতে পারেনি,সুনির্দিষ্ট সুবিচারও দিতে পারেনি।চমেক আর এই অত্যাচার-নির্যাতন-হত্যার গ্লানি বইতে রাজি নয়।আল্লাহ সকলকে সবকিছু বুঝার তৌফিক দান করুক।
- জাহিদ হাসান ওয়াকিল