𝑺𝒊𝒓𝒂𝒕 𝑨𝒍-𝑴𝒖𝒔𝒕𝒂𝒒𝒊𝒎
𝑺𝒊𝒓𝒂𝒕 𝑨𝒍-𝑴𝒖𝒔𝒕𝒂𝒒𝒊𝒎
February 16, 2025 at 05:05 PM
দু‘আ ও কামনা! -- (এক) নবীজি ﷺ এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলেন। খোঁজ-খবর করলেন। জানতে চাইলেন: -তুমি কি আল্লাহর কাছে কোনও দু‘আ করতে? -আমি আল্লাহর কাছে একটা দু‘আ করতাম: আল্লাহ! আপনি আমাকে আখেরাতে যদি কোনও শাস্তি দেয়ার থাকে, সেটা দুনিয়াতেই দিয়ে দিন! -সুবহানাল্লাহ! তুমি তো সহ্য করতে পারবে না! তুমি এই দু‘আ কেন করলে না: ইয়া রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে হাসানাহ দান করুন। আখিরাতে হাসানাহ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন! . (দুই) কারো কারো মতে, ইউসুফ আ. কারাবাস দীর্ঘ হয়ে গেলে, আল্লাহর কাছে বলেছিলেন: -আল্লাহ! বিনা দোষে এত দীর্ঘ কারাবাস! আল্লাহ বলেছিলেন: -তুমিই তো বলেছিলে: হে আমার রব! তারা আমাকে যে কাজের দিকে আহ্বান করে, তার চেয়ে জেলখানাই আমার কাছে অধিক প্রিয়! (সূরা ইউসুফ: ৩৩) ইউসুফ! তুমি যদি আমার কাছে সংকট থেকে উত্তরণ চাইতে, আমি ব্যবস্থা নিতাম। তুমিই সমাধান বের করেছ। আমি তোমার বের করা সমাধানই তোমাকে দিয়েছি। . ইমাম মাওয়ারদি রহ. বলেছেন: তাকদীর অনেক সময় মুখের কথার সাথে সম্পৃক্ত হয়। আমরা ভুলবশত মাঝেমধ্যে নিজের সম্পর্কে, সন্তানদের সম্পর্কে কিছু উক্তি করে ফেলি, পরে দেখা যায়, সেটা ফলে যায়। তাই রাগের সময়, বিরক্তির সময় মুখ খোলার আগে ভেবে নেয়া উচিত! . বিপদ এলে সেটা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। আমার পরীক্ষার জন্যে বা আমার কোনও গুনাহের জন্যে। দুটোই কল্যাণবহ। ইউসুফ আ. বিপদে না পড়লে কী হতো? বাবার কোলেই বড় হতেন। মেষ চরাতেন। অহর্নিশি ভাইদের রোষের শিকার হতেন। হয়তো একসময় গোত্রীয় দ্বন্দ্বেও জড়িয়ে পড়তেন। কিন্তু পরিবারছাড়া হয়ে কী হলো? অনেক বিপদাপদ ডিঙ্গিয়ে, চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে মিসরের শাসনকর্তা বনে গেলেন। . (তিন) মুসা আ. দু‘আর ক্ষেত্রে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন। রাব্বি! আপনি যা দিবেন, তাই সই, আমি মাথা পেতে নিবো। ইবরাহীম আ. আরও বেশি বুদ্ধিমান। তিনি এমন দু‘আ করলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষকেই তার উত্তরসূরীরূপে চেয়ে বসলেন। আল্লাহ দিয়ে দিলেন। . (চার) দু‘আ করলেই আল্লাহ কবুল করেন। যা চায় তাই পায়। হুযুর মসজিদে এমনটাই ওয়াজ করলেন। জুমার দিন। তবে বারবার চাইতে হবে। আর বিভিন্ন বাহানা দিয়ে চাইতে হবে। তাহলে আল্লাহ কবুল না করে পারবেন না। পেছনের কাতারে বসা, এক বেকার অলস কবির মনে কথাটা বেশ ধরলো। ঘর ফিরেই জানলার ধারে বসে কবিতা লিখতে লিখতে দু‘আ করলো: = আল্লাহ! এখন ফ্রেব্রুয়ারি। বইমেলা চলছে। কবিতার বইটা কেউ বের করছে না। পান্ডুলিপির খসড়া পড়ে আছে। উঁইপোকা আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। কবিতার মুসাবিদাটার এখন-তখন অবস্থা। আল্লাহ গো! বইটা ছাপানোর জন্যে কিছু টাকার ব্যবস্থা করে দেন। আর বই কেনার জন্যেও কিছু টাকা পাঠিয়ে দিন! . কবিবর দু‘আ করেই যাচ্ছে। কিন্তু কবুল হচ্ছে না। শেষে তার মাথায় বুদ্ধি খেলল, হুযুর তো বলেছেন বাহানা দিয়ে দু‘আ করতে! আমি আল্লাহর প্রশংসা করে একটা কবিতা লিখি না কেন? সেটা একটা বেলুনে বড় বড় করে লিখে, নিচে চাহিদামাফিক টাকার অংকটা লিখে, লম্বা সুতো দিয়ে ছাদে উড়িয়ে দিই! . তাই করা হল। প্রথম দিন গেলো। কিছু হলো না। যুবক হতোদ্যম না হয়ে, দ্বিতীয় দিন আরেকটা কবিতা লিখে দিল। এভাবে পরপর কয়েকদিন করলো। . বাসার পাশেই ছিল একটা পুলিশ স্টেশন। সেখান থেকে বেলুনটা সবার চোখে পড়লো। একজন অফিসার বিষয়টাতে বেশ মজা পেলেন। তিনি উদ্যোগী হয়ে চাঁদা তুললেন। দেখা গেলো পুরো না হলেও প্রায় অর্ধেক টাকা উঠে গেছে। এক কনস্টেবলকে দিয়ে টাকাটা কবির বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। দরজা খুলেই পুলিশ দেখে কবি ভড়কে গেরো। তোতলাতে তোতলাতে বললো: -আমি কিছু করিনি। আমাকে কেন ধরতে এসেছেন? -না কবিসাহেব! আপনাকে ধরতে নয় ধরাতে এসেছি! -কী ধরাতে এসেছেন? -টাকা! টাকা! -কিসের টাকা? -আপনি বেলুনে টাকার কথা লিখে আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলেন না, সেটা! -আল্লাহ আপনাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন বুঝি! -জ্বি! -দিন। পুলিশ টাকাটা হস্তান্তর করলো। কবি গুণে দেখল টাকার পরিমাণ অর্ধেক। চোখমুখ গরম করে জানতে চাইলো: -কী অবস্থা! সরকারী বরাদ্দ খেতে খেতে জিহ্বা এত লম্বা হয়েছে, এখন আল্লাহর বরাদ্দকৃত অনুদান থেকেও অর্ধেক মেরে দেয়া শুরু হয়েছে! একজন গরীব অসহায় কবির প্রতিও দয়া হলো না! ✍️ উস্তায আতিক উল্লাহ হাফিযাহুল্লাহ
❤️ 😁 2

Comments