হোক কলরব Hok Kolorob
June 1, 2025 at 03:09 PM
অভয়ার সাথীদের উদ্দেশ্যে, অভয়ার বিচার চেয়ে গোটা বাংলা তখনো রাজপথে নেমে আসেনি। তখনো তৈরী হয়নি রাতদখলের ইতিহাস। তখনো জন্ম হয়নি শেষ চার-পাঁচ দশকের সর্ববৃহৎ এক গণ আন্দোলনের। অভয়ার চোখে তখনও স্বপ্ন ছিল, রক্ত নয়। সালটা ২০২১। RG Kar মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের পদত্যাগ চেয়ে, তার যথেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে, ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র বাঁচিয়ে রাখার দাবি নিয়ে। সন্দীপ ঘোষের প্রবল ক্ষমতার সামনে হেরে গিয়েছিল তারা। শেষতক লড়াইও যথেষ্ট হয়নি। আর হেরে যাওয়া সেই গণতন্ত্রপ্রিয় ছাত্রছাত্রীদের উপর বছরের পর বছর নেমে এসেছিল সন্দীপ ঘোষ আর তার বাহিনীর পাশবিক প্রতিশোধ। কেউ বিনা কারণে ফেল করেছিল বারবার এবং বারবার, কারো রেজিস্ট্রেশন পেতে দেরী হয়েছিল দুইটা বছর, কাউকে পিটিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল রাস্তার ধারে, প্রতিবাদী ছাত্রীদের কারও কারও জন্য বা ওষুধ ছিল মোলেস্টেশন, কখনো একটা গোটা হোস্টেল গোটা একটা রাত থরথর করে কেঁপেছে বহিরাগত গুণ্ডাদের আক্রমণে। আর এই থ্রেট কালচারের উপর দাঁড়িয়ে চলেছে বেলাগাম দুর্নীতি, ওষুধ থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম তো বটেই, হাসপাতালের একটা জলের পাইপও এমনকি ছাড় পায়নি সেই দুর্নীতির কবল থেকে। অভয়ার ধর্ষণ ও খুন হল। সন্দীপ ঘোষ, তার বাহিনী, লোকাল থানা একসাথে মিলে সমস্ত প্রমাণ লোপাট করে দেওয়ার চেষ্টা করল। তারপর,রাতারাতি গোটা বাংলা একদিন নেমে এলো রাস্তায়, বিচার চেয়ে। সমস্ত মেডিকেল কলেজগুলোর ছাত্রছাত্রীরাই সেই সাহসে ভর করে সরব হয়ে উঠল থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে, ক্যাম্পাস গণতন্ত্রের দাবিতে। একে একে সবজায়গার থ্রেট সিন্ডিকেটগুলোর কুৎসিত সব রূপ উন্মোচিত হতে থাকল। আর তার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ল আপামোর জনসাধারণ। সমাজের সর্বস্তরে ভয়ের রাজনীতির যে বাতাবরণ তৈরী করে রাখা হয়েছে শাসক দলের অসীম গুণ্ডাগিরির বদান্যতায় কিংবা যেভাবে গণতন্ত্রের টুঁটি চিপে ধরা হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের দৌরাত্ম্যে ; তারই বিস্ফোরণ হল রাতারাতি। শাসক ভয় পেলেন এ বিস্ফোরণ কে। কমিশনার সরলেন, একাধিক স্বাস্থ্য কর্তাকে সরানো হল পদ থেকে। ভয় পেয়েছিল রাষ্ট্রও। তাই রাতারাতি বিচার সরল হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে। বাংলার প্রতিবাদী জনসাধারণের থেকে অনেক অনেক দূরে। *অনেক দাবির পাশাপাশি আন্দোলন থেকে এই দাবিও উঠল যে,থ্রেট কালচার কে প্রতিরোধ করতে কলেজে কলেজে করানো হোক ইউনিয়ন ইলেকশন; কলেজ অথোরিটি ও ছাত্রছাত্রীদের একাংশের এই সম্মিলিত স্বেচ্ছাচারিতার বদলে ক্যাম্পাস গুলো পরিচালিত হোক ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা, যাতে অভয়ার মতো ঘটনা আর কখনো ঘটতে না পারে।* শাসক সেসব স্বীকার করে নিলেন, ঘোষণা করলেন ২০২৫ সালের মার্চ মাসে রাজ্যের সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষণা করা হবে ইউনিয়ন ইলেকশন। আইনি লড়াই জারি রাখার শপথ নিয়ে অনশন উঠল, জনতা ঘরে ফিরল। শুধু মার্চ নয়, পেরিয়ে গিয়েছে এপ্রিলও। এখনো আসেনি কোথাও কোন কলেজে ইলেকশন করানোর ঘোষণা। শিকারি বিড়ালের মতো ওত পেতে আছে থ্রেট কালচার লবি। সমস্ত মেডিকেল কলেজেই নানান রূপে নানান নামে চলছে ফিরে আসার প্রচেষ্টা। এর মাঝে কখনো পুলিশের লাঠির ঘায়ে 'যোগ্য' শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রক্তে রক্তাক্ত হয়েছে রাজপথ। কখনো অভয়া আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম তিন মুখ ডা.দেবাশিস, ডা.অনিকেত, ডা.আশফাকের উপর প্রতিশোধ নিতে কাউন্সিলিং উপেক্ষা করেই তাদের পোস্টিং হয়েছে অন্য অন্য জায়গায়। গণতান্ত্রিক পথ নয়, রাজনীতির এ পথ প্রতিহিংসার, এ পথ ভয় ধরানোর, একটা কেউ সামান্য বিরুদ্ধাচারণ করলে এ পথ তার কন্ঠরোধের, প্রয়োজনে আঁচড়ে কামড়ে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলতে হলেও একটুও পিছপা না হওয়ার পথ। ঠিক এইরকম একটা সময় আমরা মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা চেষ্টা করেছি আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এক ক্ষুদ্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার, খানিক এই সময়টার উলটো দিকে হেঁটেই। *গত দুবছরের মতো আবারও আমরা এবছর অথোরিটির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছি ইউনিয়ন ইলেকশন।* প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের পর থেকে রাজ্যের সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মেডিকেল কলেজেও ইউনিয়ন ইলেকশন বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৬ বছর পর ২০২২ সালে ছাত্রছাত্রী আন্দোলনের জেরে ইলেকশন ঘোষণা করেও অথোরিটি তা বাতিল করে কো 'ঊর্দ্ধতন' কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে। লড়াই হয় তীব্রতর। ১৪ দিনের অনশন শেষেও অথোরিটি যখন ইলেকশন করাতে অস্বীকার করে, ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের ভোটে গড়ে নেয় নিজেদের ইউনিয়ন। প্রায় ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর ভোটে তৈরী সেই ইউনিয়নকে মান্যতা দিতে বাধ্য হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতবছর অথোরিটি অবশ্য নিজে থেকে কমিটি তৈরী করে ইলেকশন পরিচালনা করে। এরই মাঝে অভয়া আন্দোলনের প্রেক্ষিতে *মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিয়ন ইলেকশন ঘোষণা করবেন। মেডিকেলের ছাত্রছাত্রীরা অপেক্ষায় ছিল সেই দিনের। কিন্তু বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতি মিথ্যায় পর্যবসিত হয়।* পুনরায় অথোরিটির কাছে যায় ছাত্রছাত্রীরা ইলেকশনের দাবি নিয়ে। ২ রা জুন ইলেকশনের ঘোষণা করে অথোরিটি। কিন্তু ইলেকশনের ৩ দিন আগেই ফের বাধা। তৃণমূলের পোস্টারের উপর ইলেকশনের পোস্টার পড়েছে এমন হাস্যকর যুক্তিতে ইলেকশন বাতিলের মুখোমুখি হয়। অতএব, ফের প্রতিরোধ, ফের লড়াই। ৩০ শে মার্চ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের চাপের কাছে আবারও নতিস্বীকার করে অথোরিটি। *২ রা জুন ইলেকশনের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।* বেশী কিছু করার ক্ষমতা আমাদের নেই, অভয়ার বিচার চেয়ে সবার সাথে পথ হেঁটেছি আমরাও; চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা রাস্তায় বসে পড়লে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি জল-খাবার পৌঁছে দেওয়ার,যাতে লড়াই জারি থাকে; এর চেয়ে বেশী কিছু করা আমাদের ক্ষমতায় কুলোয়নি। শুধু নিজেদের কলেজের ক্যাম্পাস গণতন্ত্র রক্ষা করার দায়িত্বটুকু পালনের চেষ্টাই আমরা করতে পারি, ইচ্ছে থাকলেও এর বাইরে বিশাল কিছু করে ফেলতে পারি না আমরা, লড়াইগুলোর সহযোদ্ধা হতে পারি কেবলমাত্র। এই ইলেকশনে কারা হারবে কারা জিতে ইউনিয়নে ক্ষমতায় আসবে, তা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় এখন দাঁড়িয়ে, আমরা শুধু চাই এই ইউনিয়ন ইলেকশনের মাধ্যমে সমস্ত ছাত্রছাত্রী ও সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে একটাই বার্তা পৌঁছে দিতে , *সমাজের সর্বজায়গায় সর্বস্তরে গড়ে উঠুক গণতন্ত্র রক্ষার এই লড়াই; শুধু মেডিকেল কলেজ কলকাতা নয়, সমস্ত মেডিকেল কলেজ, সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠুক গণতন্ত্রের দাবি, ইউনিয়ন ইলেকশনের দাবি, এই আমাদের আশা।* শাসকের আবার দাঁত-নখ বের করে ভয়াবহ হয়ে ওঠা এই সময়েও আমরা বিশ্বাস রাখি সেই আপনাদের উপর, যারা একদিন বিচার চেয়ে পথ হেঁটেছেন মিছিলের পর মিছিল, এই থ্রেট কালচার আর অগণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে জেগেছেন রাতের পর রাত; সেই বিশ্বাস থেকেই আপনাদের সকলের কাছে আহ্বান, *আগামীকাল, ২ রা জুন ইলেকশনের দিন, মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের গণতন্ত্র রক্ষার এই শপথগ্রহণে আমাদের পাশে থাকুন।* মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে.......
❤️ 👍 🔥 😂 🫂 100

Comments