Al-Huda wa An-Noor
Al-Huda wa An-Noor
June 19, 2025 at 02:18 AM
ইহুদি ও মুশরিকের লড়াই-২ -- হাজার হাজার ইরানি জনগণ তেহরান বিমানবন্দরে বাইরে জড়ো হয়েছে। তথাকথিত মাহদি (المهدي المزعوم)-কে স্বাগত জানানোর জন্য। আজ ফ্রান্স থেকে খোমেনি আসবে। বহুল প্রতীক্ষিত ১২-তম ইমাম। শিয়াদের বিশ্বাস, তাদের বারোতম ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান ৮৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে আত্মগোপনে আছেন। তিনি একদিন আত্মপ্রকাশ করবেন। আজ সেই কাঙ্খিত দিন। ইমাম সাহেব তার আত্মগোপন অবস্থা কাটিয়ে ধরায় ফিরছেন। শীয়াদের বিশ্বাস, বারোতম ইমাম কোনো গর্তে লুকিয়ে আছেন। আজকের ইমামও গর্ত ফ্রান্সের (Neauphle-le-Château) থেকে মাথা বের করেছেন। ফরাসি বিমান সসম্মানে ইমামকে নিয়ে আসছে। ফরাসি গোয়েন্দাদের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় ‘মাহদি’ সাহেবকে ঘিরে রেখেছে। টিভি দেখা শেষ। এবার পত্র-পত্রিকার দিকে নজর বোলানো যাক। আরব ও মুসলিম বিশ্বের পত্র-পত্রিকাগুলোতে শুধু খোমেনি আর খোমেনি। পত্রিকাগুলো টপ টু বটম খোমেনি জোয়ারে সয়লাব। শুধু কি তাই? আরব ও মুসলিম বিশ্বের মসজিদ-মিম্বরও খোমেনি তুফান চলছে। ইরানে ইসলামি (?) বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এমন অভূতপূর্ব বিজয় ইসলামের ইতিহাসে আর ঘটেছে বলে মনে পড়ে না। আরবের দিকে দিকে, মিম্বরে মিম্বরে ধ্বনিত হচ্ছে: হে আল্লাহ, খোমেনি ও তার সহযোগীদেরকে সাহায্য করুন। সদ্য প্রতিষ্ঠিত ‘ইসলামী রাষ্ট্র’-টিকে আবাদুল আবাদ স্থায়ী করুন। আমীন। স্বপ্ন-কল্পনা শেষ। এবার সম্বিত ফিরে দেখা যাক। আল্লাহপ্রদত্ত আকল কাজে লাগানো যাক। খতিয়ান বের দেখা যাক, গর্ত থেকে বেরিয়েআসা ‘ইমাম’, পরবর্তী দশ বছর ধরে মুসলমানদের সাথে কেমন আচরণ করেছে? ইমামের অনুসারীরা পরবর্তী ৪০ বছর ধরে কী করে আসছে? সবাই ইরান, খোমেনি, ইসলামী বিপ্লব নিয়ে চরম উচ্ছ্বসিত। স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটা ভীষণ বিপদ। জনরোষের মুখে পড়ে প্রাণ খোয়াতে হয়। তারপরও অল্পকিছু মানুষ আল্লাহর দেয়া ‘আকল’ কাজে না লাগিয়ে থাকতে পারেন না। অন্যদের মতো গা ভাসিয়ে দিতে পরেন না। বিবেক তাদেরকে কুটকুট করে কামড়ায়। তাদের বিশুদ্ধ আকীদা, পরিচ্ছন্ন চিন্তা, সত্যান্বেষী দূরদৃষ্টি, তাদেরকে মুদ্রার অপর পিঠের দিকে তাকাতে বলে, পর্দার অন্তরালে কিছু ঘটছে কি না, খতিয়ে দেখতে বলে। এমন একজন মানুষ হলেন শায়খ সাঈদ হাওয়া (১৯৩৫-১৯৮৯। মাযহাবে হানাফী। আকীদায় আশআরী। তাসাউফে নকশেবন্দী। রাজনীতিতে ‘ইখওয়ানী’। ‘আল-আসাস ফিত-তাফসীর নামে তার ভিন্নধর্মী অসাধারণ এক তাফসীর আছে। তিনি ছিলেন সিরিয়ান ইখওয়ানুল মুসলিমুনের নেতা। তার প্রাণের দল ইখওয়ানও খোমেনিতে আকণ্ঠ বুুঁদ হয়ে আছে। ইখওয়ান এখনো খোমেনিয় ভ্রান্তি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এই ভ্রান্তির খেসারত গত চল্লিশ বছর ধরে ইখওয়ান দিয়ে আসছে। খোমেনীয় ভ্রান্তির সর্বশেষ শিকার মরহুম মুহাম্মাদ মুরসি। তিনি নির্বাচিত হয়েই তথাকথিত ইসলামী বিপ্লবের সূতিকাগার তেহরানে গিয়েছিলেন, তাওয়াফে যেয়ারত সারতে। প্রথমে মক্কায় না গিয়ে, কুমে যাওয়ার পরিণতিতে মুরসি মরহুমকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে। মুরসিরই কী দোষ, পৃথিবীর খুব কম ইসলামি দলই খোমেনির হিপনোটিজম থেকে বাইরে থাকতে পেরেছে। তাই বলে এতদিন পরও ঘোর কাটবে না? সুবহানাল্লাহ। শায়খ সাঈদের বিশুদ্ধ তাওহিদী ফিরাসতে খোমেনির ভাবগতিক সুবিধার ঠেকল না। ইসলামের নামে যারা রাজনীতি করে, তাদের বেশিরভাগই দলীয় বয়ানের বাইরে যেতে পারে না। অধিকাংশই ইসলামের গোলামী করার জন্যই শুরুতে ইসলামী দলে যোগ দেয়। একসময় ইসলাম বাদ দিয়ে দলের গোলামে পরিণত হয়। শায়খ সাঈদ ছিলেন ব্যতিক্রম। তেহরানে তখন রমরমা অবস্থা। বাজার গরম। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে একের পর প্রতিনিধি দল আসছে। খোমেনিকে পূজা দিয়ে যাচ্ছে। আরব, অনারব, মুসলিম, অমুসলিম কেউ বাকি নেই। মরক্কো থেকে সুমাত্রা পযন্ত খোমেনি আর খোমেনি। সেটা ছিল শীয়াগৌরবের চরম শিখর। বোধ করি ইতিহাসে আর কখনো শীয়াদের এমন উত্তুঙ্গ সাফল্য আসেনি। শিয়া ইতিহাসে শুধু দুজন ব্যক্তিই খোমেনির সাথে তুলনীয় হতে পারে, ১. বুয়াইহি রাজবংশের শাসক মুইজ্জুদ-দৌলা (৯১২-৯৬৭)। ৯৪৫ সালে এই খবিস শিয়া আব্বাসী খলিফার দুর্বলতার সুযোগ বাগদাদের ওপর চেপে বসেছিল। তার হাত ধরেই বাগদাদে প্রথমবারে মতো তাজিয়া মিছিল, শিয়া আচার-অনুষ্ঠান পালন শুরু হয়েছিল। এই ব্যাটা খোমেনির মতো ইসনা আশারিয়া শিয়া ছিল। ২. কায়রো শহরের প্রতিষ্ঠাতা (!) আল-মুইজ (৯৩২-৯৭৫)। এই খবিস ইসমাঈলি শিয়া ছিল।নিজেকে ফাতেমার বংশধর হওয়ার ভুয়া দাবি করত। তথাকথিত ফাতেমি খিলাফাহর চতুর্থ খলীফা ছিল এই লোক। তার আমলেই জামে আযহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই শয়তানেরা আব্বাসী খিলাফাহর বিপরীতে ভ্রান্ত শিয়া খিলাফাহব্যবস্থা দাঁড় করিয়েছিল। আল্লাহ তাআলা সালাহুদ্দীন আইয়ুবি রহ.-এর মাধ্যমে এই ভূয়া খিলাফাহর পতন ঘটিয়েছিলেন। আমরা শায়খ সাঈদ হাউয়ার কাছে ফিরে আসি। মুসলিম বিশ্ব তখন খোমেনি জোয়ারে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম ছিল না। শায়খ সাঈদ সিরিয়ান ইসলামি স্কলারদের একটি দলের সাথে ভাসতে ভাসতে তেহরানে গিয়ে ভিড়লেন। উদ্দেশ্য? সদ্য গর্তনির্গত এমাম খোমেনির আশীর্বাদ লাভ। এমামের কাছে সংবাদ পাঠানো হল। সিরিয়া থেকেএকদল আলিম এসেছেন। এমামের সাক্ষাতপ্রার্থী। একদিন যায়, দুদিন যায়, এমামের পক্ষ থেকে সাড়া আসে না। একবার বলা হয় এমাম ভীষণ ব্যস্ত, ফারেগ হলেই দর্শন দিবেন। আবার বলা হয়, এমাম জরুরি মিটিংয়ে আছেন। শায়খ সাঈদ ও তার দল অপেক্ষা করছেন- একদিন ছুটি হবে, এমামের সময় হবে (চলবে) আতিক উল্লাহ হাফিঃ
❤️ 🩷 4

Comments