Al-Huda wa An-Noor
Al-Huda wa An-Noor
June 19, 2025 at 08:41 AM
ইহুদি ও মুশরিকের লড়াই-৩ -- দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর খোমেনির সাক্ষাতলাভে ধন্য হলেন সিরিয়ান ওলামায়ে কেরামের প্রতিনিধিদল। সাক্ষাতশেষে তারা বেজায় হতাশ। খোমেনি মাত্র কয়েক মিনিট সময় দিয়েছে। অত্যন্ত শীতল আচরণ করেছে। শুধু তাই নয়, কথাবার্তার জন্য একজন দোভাষী রেখেছে। ভাবটা এমন যেন, খোমেনি আরবী জানে না। অথচ খোমেনি তেরো (১৯৬৫-১৯৭৮) বছর ইরাকের নাজাফ শহরে নির্বাসিত ছিল। খোমেনি আরবী বলা, পড়া ও লেখায় পারদর্শী ছিল। সিরিয়ান প্রতিনিধি দল আবেদন করেছিল, খোমেনি যেন সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট হাফেজ আসাদকে অনুরোধ করে, সিরিয়ান মুসলমানদের ওপর চলমান নিযাতন-নিপীড়ন বন্ধ করার কাযকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রতিনিধিদল সরলমনে বিশ্বাস করছিল, খোমেনি সত্যি সত্যিই ইসলামি বিপ্লব সাধন করেছে। যেমনটা এখনো অনেক ‘নির্বোধ’ মনে থাকেন। প্রতিনিধিদলের আবেদনের জবাবে খোমেনি আশ্বাস দিয়েছিল, সে হাফেজ আসাদকে বলে জুলুম-নিযাতন বন্ধ করবে। আশ্বাস পেয়ে গদগদচিত্তে প্রতিনিধিদল সিরিয়ায় ফিরে এল। শায়খ সাঈদের মনে খচখচ করতে লাগল। তিনি স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। তার শুধু মনে হচ্ছিল, কোথাও বড় ধরণের গড়বড় হচ্ছে। প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মতো তিনি ভ্রান্তভ্রমে পড়ে থাকলেন না। খোমেনির আচরণ তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। তার বিশুদ্ধ আকীদার ‘ছাঁকনি’ খোমেনিকে সাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করতে বাধা দিচ্ছিল। অনেক চিন্তাভাবনা, খোঁজখবর করার শায়খ সাঈদ ছোট্ট এক পুস্তিকা লিখলেন। তার দল ইখওয়ানের খোমেনিপ্রীতি তাকে বড্ড পীড়া দিচ্ছিল। সাধারণ মুসলমান ও ইখওয়ানকে সতর্ক করে শায়খ সাঈদ ছোট্ট একটি পুস্তিকা রচনা করলেন। তাতে খোমেনির ভ্রান্ত আকীদা তুলে ধরলেন। পুস্তিকার নাম দিলেন (الخمينية شذوذ في العقائد شذوذ في المواقف) খোমেনী মতবাদের ভ্রান্তি। বইটা মিসরে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। পরে নিজেই মিসরে গেলেন। ইখওয়ান নেতৃবৃন্দকে অনাগত বিপযয় সম্পর্কে সতর্ক করতে। বলাবাহুল্য ইখওয়ান তার চিরাচরিত পথেই হেঁটেছে। শায়খের নসিহত গ্রহণ করেনি। বেশিরভাগ ইসলামী দলও তাই। নিজেদের গঠনতন্ত্রকে কুরআনের চেয়েও বেশি অকাট্য মনে করে। নিজেদের ভ্রান্তি সম্পর্কে বাইরের কারো পরামর্শ গ্রহণ করতে চায় না। সর্বকালে, সর্বদেশে এটাই ছিল ইখওয়ানের মূলবৈশিষ্ট্য, দলীয় মেনিফেস্টোর বাইরে পরামর্শ গ্রহণ করে না। অথচ শায়খ সাঈদ ইখওয়ানের কর্ণধার পযয়ের মানুষ ছিলেন। তার নসিহতও ইখওয়ানের মুখে রোচে নি। এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। ইরানি শিয়াদের বিজয় মানে কি ইসলাম ও মুসলমানের বিজয়? প্রথম উত্তর খোমেনির ইরান কি মুসলমানদের স্বার্থে কাজ করেছে?  উত্তরটা পেতে আমরা ১৯৮২ সালের সিরিয়াতে যাবো। হাফেজ আসাদ ১৯৭০ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল। দমনপীড়নের মাধ্যমে পুরো সিরিয়াতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সিরিয়ার হামা শহর ছিল ইখওয়ানুল মুসলিমুনের শক্ত ঘাঁটি। হামার ইখওয়ানিরা হাফেজের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ করল। হাফেজ আসাদ হামা দমনের জন্য ছোট ভাই রিফআত আসাদকে দায়িত্ব দিয়েছিল। রিফআত সেনাবাহিনী নিয়ে পুরো হামা শহর ঘিরে ফেলল। ৮২ সালের পুরো ফেব্রুয়ারি জুড়ে হামা শহরে গণহত্যা চালাল। ৪০ হাজার মানুষ শহীদ হয়েছিলেন এই ক্র্যাকডাউনে। এমন সঙ্গীন মুহূর্তে সিরিয়ান ইখওয়ানিরা অবাক হয়ে দেখল, ইরান থেকে এক ‘আয়াতুল্লাহ’এসেছে দামেশকে। আয়াতুল্লাহ সাদেক খালখালি (১৯২৬-২০০৩)। তাকে ইরানি বিপ্লবের কসাই বলা হয়। খোমেনি তাকে বিপ্লবী আদালতের প্রধান বিচারক বানিয়েছিল। বিপ্লববিরোধী, শাহের সমর্থক, ভিন্নমতের লোকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কাযকর করতে এই সাদেক। কথিত আছে, তার হাতে মোট ৮ হাজার মানুষ মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিল। শেষজীবনে তার মধ্যে অতীতকর্মের জন্য অনুশোচনা দেখা দিয়েছিল। তালেবান বামিয়ানে বৌদ্ধমূর্তি ভাঙলে, সাদেক খালখালি সমর্থন জানিয়েছিলেন। তার চমৎকার একটি আত্মজীবনী আছে। সাদেক খালখালির আগমনে কোনো কোনো ইখওয়ানি বেশ আশাবাদি হয়ে উঠল। তাদের দুর্দিন বুঝি ফুরিয়ে এল। দুই বছর আগে খোমেনির কাছে আবেদন করা বুঝি এতদিনে স্বার্থক হল। ইখওয়ানিরা (তাদের অনুসারী অন্য ইসলামী দলও) সবসময় ঘোরের মধ্যে বাস করে। তাদের খোমেনি ঘোর কাটতে দেরি হল না। তারা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করল, সাদেক খালখালি দামেশকে ঘোষণা দিল বেলায়েতে ফকীহ খোমেনির ইরান সবসময় সিরিয়ার সাথে থাকবে। ইখওয়ানুশ শায়াতিনের বিরুদ্ধে হাফেজ আসাদকে সমর্থন জুগিয়ে যাবে। হাঁ, সাদেক খালখালি ইখওয়ানুল মুসলিমুনকে সত্যি সত্যি ইখওয়ানুশ শায়াতীন বলেছিল। এটা ছিল স্যাম্পল। এরপর থেকে খোমেনির পুরো মিডিয়াশক্তি ইখওয়ানের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। হামা গণহত্যায় খোমেনি আগাগোড়া হাফেজ আসাদকে নিরংকুশ সমর্থন দিয়ে গেছে। হামা গণহত্যার ৩০ বছর পরও ইরানের অবস্থানে সামান্যতম পরিবর্তন এসেছে? বাশার আসাদবিরোধী আন্দোলনে ইরানের অবস্থান কেমন ছিল? সিরিয়ার ইখওয়ান কি তাদের পীর-মুর্শিদ ইরানের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পেয়েছিল? সিরিয়ান সাধারণ মুসলিম জনগণ ইরানের পক্ষ থেকে কোনো সুবিধা পেয়েছিল? হাঁ, পেয়েছিল। ইরান তার সর্বশক্তি দিয়ে বাশারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। ইখওয়ানের বর্তমান নেতৃবৃন্দকে হত্যা, দেশছাড়া করেছিল। গোটা সিরিয়াজুড়ে ইরানি মিলিশিয়ারা অকল্পনীয় গণহত্যা চালিয়েছিল। দ্বিতীয় উত্তর চলবে…
❤️ 🩷 3

Comments