𝑺𝒊𝒓𝒂𝒕 𝑨𝒍-𝑴𝒖𝒔𝒕𝒂𝒒𝒊𝒎
𝑺𝒊𝒓𝒂𝒕 𝑨𝒍-𝑴𝒖𝒔𝒕𝒂𝒒𝒊𝒎
June 18, 2025 at 10:22 PM
‘নামাজ না পড়লে কী এমন ক্ষতি?’ ‘অমুক তো নামাজ-রোজা কিছুই করে না, তাও সুখেই আছে।’ ‘এত ইবাদত করে কী হবে? যারা ইবাদত করা না তারাই তো ক্যারিয়ারে, পড়াশোনায় সফল হচ্ছে।’ এ ধরণের কথা প্রায়ই শুনতে পাই। ইবাদতের পুরস্কার বা শাস্তিকে অনেকে কেবল পার্থিব-বস্তুগত লাভ-ক্ষতি দিয়ে মাপতে চায়। কিন্তু ইবাদতের সবচেয়ে বড় পুরস্কার তো পার্থিব সবকিছুর ঊর্ধ্বে। না, না, আমি আখিরাতের পুরস্কারের কথা বলছি না। জাহান্নাম থেকে রক্ষা, জান্নাতের আশ্রয় তো আছেই; দুনিয়ার বুকে ইবাদতের পুরস্কারের কথা বলছি। নিয়ামত বৃদ্ধি, রিযকে বারাকাহ—এসবও নয়। ইবাদতের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি অন্য কিছু, যেটার কথা আমরা ভুলতে বসেছি। কেউ কেউ তো জানেই না! ইবাদতের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো—ইবাদতের স্বাদ, আল্লাহর নৈকট্য। ইবাদতে প্রশান্তি-আনন্দ যে একবার পেয়েছে সে জানে, অন্য যেকোনো জিনিস এর কাছে তুচ্ছ। এজন্য তো রাসুলুল্লাহ ﷺ সালাতকে তাঁর চোখের শীতলতা বলেছেন। আল্লাহর কাছে দু'আ করেছেন—‘কুরআনকে বানিয়ে দিন আমার হৃদয়ের বসন্ত, আমার চোখের জ্যোতি, আমার বেদনার মলম ও আমার দুশ্চিন্তার উপশম।’ ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ বলতেন, ‘এই পৃথিবীতেই একটি জান্নাত আছে। যে ব্যক্তি এই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, সে পরকালের জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না।’ পৃথিবীর জান্নাত বলতে তিনি মূলত ইবাদত ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমে যে প্রশান্তি পাওয়া যায়, সেটিকে বুঝিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘রাজা-বাদশাহরা যদি জানত আমরা ইবাদতে কত সুখ-প্রশান্তি পাই, তাহলে তা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসত।’ যারা অহংকারের বসে ইবাদত করতে চায় না, তাদের অন্তর তো মৃত, মোহরাঙ্কিত। তাদের কথা আলাদা। কিন্তু কেউ কেউ আছেন, যারা ‘ইবাদত করা উচিত’ মনে করেও আমল-ইবাদত করার আগ্রহ পান না। আবার যারা নিয়মিত আমল করার চেষ্টা করি তারাও কখনো কখনো দুঃখ প্রকাশ করি—ইবাদতের আগ্রহ পাই না, ইবাদত করে তৃপ্তি পাই না। এর অন্যতম কারণ আমাদের গুনাহ। প্রধানত আমাদের গুনাহই আমাদেরকে ইবাদতের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করে, ইবাদতের স্বাদকে নষ্ট করে। গুনাহই ইবাদতে তৃপ্তি লাভের পথে বাধা। শুধু তা-ই নয়, গুনাহ মানুষকে আমল-ইবাদত থেকে দূরে সরে নিয়ে যায়। উহাইব ইবন আল-ওয়ার্দ আল-মাক্কি একজন তাবেয়ি। রহিমাহুল্লাহ। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘গুনাহ করার পরও কি কেউ ইবাদতের স্বাদ পেতে পারে?’ তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘না৷ গুনাহ করার কথা চিন্তা করলেও ইবাদতের স্বাদ কমে যায়।’ ইবাদতের স্বাদ যে কেবল বড় ধরণের গুনাহয় লিপ্ত থাকলেই নষ্ট হয়—তা কিন্তু নয়। ছোট ছোট গুনাহর কারণেও হতে পারে। যারা বেশি নেককার তাদের সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতিতেও এমনটা ঘটতে পারে। যেই ত্রুটিটা হয়তো অন্য লোকদের জন্য কোনো ইস্যুই না, আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা সেই একই কাজ করলে বড় ধরণের নেতিবাচক কিছুর সম্মুখীন হতে পারেন। তাই  আমাদের নিজেদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে—আমি কি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হই বা হয়েছি যেটা আল্লাহ পছন্দ করেন না? তারপর সেই কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, তাওবা করতে হবে।  ভালো করে মনে গেঁথে নিই—তাওবা করায় কোনো ক্ষতি নেই। আল্লাহর জন্য কোনো ত্যাগ স্বীকারে ক্ষতি নেই। উল্টো লাভ আছে। হতে পারে আপনি একটা কাজে ভীষণভাবে জড়িয়ে পড়েছেন, ভাবছেন—বড় কোনো গুনাহ না, তবে...উমম...ছেড়ে দেয়াই ভালো...কিন্তু ছেড়ে দেয়াটা হয়তো কষ্টকর হয়ে যাবে;  তাহলে 'কিন্তু' 'কিন্তু' বাদ দিয়ে ছেড়েই দিন। বিশ্বাস করুন, এর কয়েকগুণ বেশি আল্লাহ আপনাকে দিবেন কোনো না কোনোভাবে। আর ইবাদতের আনন্দটা তো নগদ উপহার। ~ সংগৃহীত
❤️ 4

Comments